অগ্রসর রিপোর্ট : সরকারের নানামুখী কার্যকরী বিনিয়োগ বান্ধব উদ্যাগ বাস্তবায়নের ফলে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশে দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প নীতি, প্রবৃদ্ধি কৌশল ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রমের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়াতেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে ।
এ বছরের জুন মাসে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ ৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০০৮ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৭ শত ৪৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা)-এর অধীনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্টে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭২ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার।
সরকারি, যৌথ মালিকানা এবং ১০০ ভাগ বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রকল্পের অধীনে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ১৫ হাজার ৮ শত ৮৬টি শিল্পাঞ্চল নিবন্ধন করেছে। যেখানে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ২২ হাজার ৮ শত ২৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার । এর মধ্যে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৭ শত ৬৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার । আর এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ৩০ লাখেরও বেশি লোকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি বেপজার মহাব্যবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর বাসসকে বলেন- বেপজার বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপের কারণে গত কয়েক বছরে দেশের ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় ( ইপিজেড’স) বিনিয়োগের প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশের ৮টি ইপিজেডের অধীনে ৪৭৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত ১০ বছরে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে আড়াইগুণ আর কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে দুইগুণ।
নাজমা আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে বেপজা।
বেপজার কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে দেশের ইপিজেডগুলোয় মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৫৯ কোটি ৮২ লক্ষ ৪০ হাজার ইউএস ডলার যা ২০১৮ সালের আগষ্টে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ হাজার ২২ কোটি ১৩ লাখ ইউএস ডলার।
বেপজার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের জন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬৪ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার, ঢাকা ইপিজেডে ১৩৬ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ইউএস ডলার, কুমিল্লা ইপিজেডে ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ১০ হাজার ইউএস ডলার, মংলা ইপিজেডে ৫ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার ইউএস ডলার, উত্তরা ইপিজেডে ১৫ কোটি ৯০ লাখ ইউএস ডলার, ঈশ্বরদী ইপিজেডে ১৩ কোটি ৬৭ লক্ষ ৭০ হাজার ইউএস ডলার, আদমজী ইপিজেডে ৩৭ কোটি ১৭ লাখ ইউএস ডলার এবং কর্ণফুলী ইপিজেডে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার ইউএস ডলার।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, বিনিয়োগ বিকাশে সরকার বিভিন্ন বিনিয়োগ বান্ধব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেযোগ্য হলো, ১০ থেকে ১৫ বছরের কর অবকাশ এবং বিদ্যুতের উপর থেকে ১০ বছরের ভ্যাট মওকুফ। বাংলাদেশে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট ট্যাক্সের মানদন্ড অনুসরণ করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে ।
আগামী বছরগুলোতে বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান আরো উন্নত করতে বিডা ২০১৯ সালের জানুযারিতে দেশে পূর্ণাঙ্গ ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করতে যাচ্ছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার (ওএসএস) চালু হলে উদ্যোক্তারা এক জায়গা থেকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব অনুমতি পাবেন। এতে বিজনেস সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অগ্রগতি হবে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ওএসএস থেকে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল অনুমতি পাবেন এবং ব্যবসা শুরু করার পর ওএসএস সেন্টার থেকে খুব সহজেই বিদ্যুত, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন সংক্রান্ত সকল সেবা পাবেন।
তিনি আরো বলেন, এই সেবা কেন্দ্রটি চালু হলে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ আরো বৃদ্ধি পাবে। কারণ নতুন এই প্রযুক্তিভিত্তিক সার্ভিস সেন্টার চালু হলে একটি কোম্পানি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পাবে।
তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা সম্পর্কিত আইন-কানুন ও বিধি-নিষেধ কিছুটা সংশোধন করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৭৬ থেকে কমিয়ে ১০০এর নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
শিল্পজাত পণ্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার কারণে সরকার এ জাতীয় পণ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্যের ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়ক ও কার্যকরী উদ্যোগ করেছে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য শিল্পগুলো হলো; কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, চামড়ার তৈরি জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, ঔষধ শিল্প , সফট্ওয়্যার ও প্রকৌশল পণ্য এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্প।