অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের প্রতি দেশের সাফল্যের কথা ব্যাপকহারে প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাঁর সম্মানে আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখা-এর দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ আশাপ্রদ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং দেশটি এখন বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে রয়েছে। এই বিষয়টি বিদেশে তুলে ধরা প্রয়োজন।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী একই সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশে যান এবং আমাদের উন্নয়নের কথা প্রচার করুন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে বুঝাতে আমাদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে আপনাদেরকে তাদের কাছে যেতে হবে।’
গতকাল মেরিয়ট মার্কুইস হোটেল বলরুমে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী এতে অংশ নেন। শেখ হাসিনা এখানে বলেন, ‘তাঁর সরকারের প্রধান শক্তি জনগণের সমর্থন এবং জনগণই আওয়ামী লীগের মূল প্রেরণা।’
তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা সর্বদা সকল সংকটে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাদের অবদান অব্যাহত রেখেছে। ৭২তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে তিনি এখন নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (প্রবাসীরা) মুক্তিযুদ্ধকালে এবং দেশের সকল সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’ এ সময় তিনি সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার চলাকালে তাঁর পাশে অবস্থানের বিষয়ে তাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক অতীতে অথ্যাৎ ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতা দখল এবং বিদেশ থেকে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রতিরোধ প্রচেষ্টাকালে অনেক প্রবাসী অত্যন্ত সাহসিকতা দেখিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের অনেকেই শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছেন এবং সে সময় দেশে ফেরার পথে আমার সঙ্গে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের কল্যাণে অবদান রাখার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন দত্ত ও আবদুর রহিম বাদশা, নিউইয়র্ক শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন, স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহনাজ, সদস্য রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতিগণ বক্তব্য রাখেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও এসএম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গত ৮ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময়ে দেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে তা নজিরবিহীন।
‘বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭-এর কোটায় প্রবেশ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা, সেজন্য তার সরকার শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছরের শেষ দিকে মহাকাশে নিজেদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। তিনি বলেন, নগর ভিত্তিক উন্নয়নের পরিবর্তে তাঁর সরকার গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এই লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক বাড়ি বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ সীমাহীন দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মধ্যে নিমজ্জিত হবে’।
তিনি বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি ও অধিকার আদায়ের জন্য জাতির পিতা তাঁর সারাটি জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।
তিনি বলেন, একমাত্র বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সকল সুখ ও আকাংখাকে বিসর্জন দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর দেশ যখন সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ গুদামে খাদ্য সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল ও সরকারি কোষাগার প্রায় শূন্য, তখন বঙ্গবন্ধু দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ৯ মাসের মধ্যে একটি সাবেক প্রদেশ মর্যাদার দেশকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে পরিণত করার জন্য সংবিধান ও বেশিরভাগ অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনী সকল আইন ও নীতি নির্ধারণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের মধ্যে যে ব্যাপক কাজ করেছেন, তা কোন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। প্রশাসনিক দক্ষতা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের চেতনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর দায়িত্ব পালন করে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কারণেই স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যেই ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়। যা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। সমসাময়িক ইতিহাসে, তিনি বলেন, বিশ্বের যে কোন অংশে এমন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘটনা খুবই বিরল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জনগণকে খুবই ভালবাসতেন এবং তাদের সহায়তায় দেশের প্রতিটি সেক্টর ও প্রতিটি ইনিষ্টিটিউট পুর্নগঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধু মানব সম্পদকে তার দেশের প্রধান শক্তি হিসাবে মনে করতেন এবং তিনি তাঁর দেশবাসীর সহায়তায় দেশ ও প্রতিটি ইনিস্টিটিউট গঠন করেন।
বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে আমাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি আদায় করেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের খুব অল্প সময়ে মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের স্বীকৃতিও অর্জন করেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশের অর্থনীতি ভাল ছিল। সে সময়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করার পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি থেমে যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাবা-মা এবং পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে একই সঙ্গে হারানো ছিল আমাদের জন্য খুবই দুভার্গ্যজনক’।
তিনি আরো বলেন, জনগণকে শুধু সে সময়ে তাদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হারানোর ব্যাথাই সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে এক সাথে হারিয়ে আমরা বিশ্বের মধ্যে এক অন্যতম দূভাগ্যজনক পরিবার।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান সরকার ছয় বছর তাঁকে ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। জিয়াউর রহমান তাদের পাসপোর্ট নবায়নে অস্বীকার করেছেন। তিনি ১৯৮১ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করায় দলের নেতাদেরকে ধন্যবাদ জানান। দলের এই সিদ্ধান্ত শত বাধা উপেক্ষা করে তাকে দেশে ফিরে আসার পথকে প্রশস্ত করেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে রাজনীতিকে সংঘাতও বিরোধপূর্ণ করে তুলেছিলেন। জিয়া দেশকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ঠেলে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে এসে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে আসে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশ এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকে ভাল অবস্থানে রয়েছে।
তিনি দেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দ ও আস্থার বিষয় যে, বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশি দেশের জনগণের দু:সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে’।
জয় বলেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, দেশ এগিয়ে যাবে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণের উচিত শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় রাখা’।