স্টাফ রিপোর্টার: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ‘বিতর্কিত’ ৫৭ ধারা বাতিল করে তা প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে প্রতিস্থাপন করা হবে নাকি ধারাটি একেবারে বাতিল করা হবে তা আগামী আগস্ট মাসে জানা যাবে।
সচিবালয়ে রবিবার (৯ জুলাই) এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত এ সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সভায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আলাপ-আলোচনায় আমরা অনেক কিছু নিয়ে এসেছি। যেগুলো সম্বন্ধে আজকের মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তিনজনে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আলাপ-আলোচনা করে যে সব কথা বেরিয়েছে সেটার একটা রূপরেখা করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে সেগুলো এনে আগামী আগস্ট মাসে এটার একটা চূড়ান্ত ড্রাফট নিয়ে আবার মিটিংয়ে বসব। সেই মিটিংয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
‘সেখানে ৫৭ ধারা সম্বন্ধেও আমাদের সিদ্ধান্ত আপনারা পাবেন। কিন্ত এখন আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি বলেই এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না’ বলেন আনিসুল হক।
আগে আপনি বলেছিলেন আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা থাকছে না। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ১৯ ধারায় ৫৭ ধারাটাই ঘুরেফিরে রয়ে গেছে। এ বিষয়ে অবস্থান কি- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো আপনাদের বলেছি, আমরা এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি। আপনারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে জানতে পারবেন।’
একই ধারা তো দুই আইনে থাকবে না- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘(থাকবে না এটাই) স্বাভাবিক’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় যেসব মামলা হচ্ছে তা নিয়ে আজকের মিটিংয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ ছিল কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো কথাবার্তা এই মিটিংয়ে বলিনি।’
নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত কি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অব্যাহত থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘৫৭ ধারা যদি আমরা বাতিলও করে দেই তাহলে এই মামলাগুলো যেগুলো হয়েছে। সেই আইন যখন করব সেই ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। ৫৭ ধারার মামলাগুলো কোর্টের এবং তদন্তের এথতিয়ারাধীন আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি ৫৭ ধারায় যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলোতে সংবাদিকরা এবং বাক স্বাধীনতার ব্যাপারে যদি কোনো ইয়ে (হরণ) করা হয়ে থাকে সেখানে তদন্তকারী সংস্থা সেটা দেখবে।’
এ সময় পাশে বসা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সচিবও আমার সঙ্গে একমত বোধহয়। আমরা অত্যন্ত স্ক্রটিনাইজ করব ইনভেস্টিগেশনের সময়। যাতে কোনো মতে নির্দোষ কোনো সাংবাদিক এটায় (৫৭ ধারায়) সাজা না পায় বা হয়রানী না হয়। সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।’
অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এই মামলায় (৫৭ ধারার) চার্জশিট দেওয়ার আগে একটা তদন্ত হয়। সেই তদন্তটা অত্যন্ত সুষ্ঠু হবে, এটা আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি।’
৫৭ ধারায় বেশির ভাগ মামলা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে। এই ব্যাপারে আপনাদের কোনো কনসার্ন থাকে, আমি তা নোট করব। আমি সেই কনসার্নটা ইনভেস্টিগেটিং অথরিটির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি, তারাও যাতে আপনাদের কনসার্নের দিকটা বিবেচনা করে তাদের ইনভেস্টিগেশন চালায়।’
সভায় আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব শহিদুল হক, বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।