অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৭শ’ ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তির ঘোষণা দিয়ে এর নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘ আপনারা নীতিমালা অনুযায়ী সকল নির্দেশনা পূর্ণ করতে পেরেছেন বলে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন। কাজেই এটা ধরে রাখতে হবে।’
‘কেউ যদি এটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, সাথে সাথে তার এমপিও ভুক্তি বাতিল হবে। কারণ এমপিও ভুক্তি হয়ে গেছে- বেতনতো পাবই, ক্লাশ করানোর দরকার কি, পড়ানোর দরকার কি, এ চিন্তা করলে কিন্তু চলবে না’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে নতুন করে এমপিও’র তালিকা ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ঘোষণা উপলক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকে নতুন করে ২ হাজার ৭শ ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এপিও ভুক্ত করলাম। একটি নীতিমালা করে নিয়ে যাচাই বাছাই করে তারপরে এই তালিকাটি তৈরী করা হয়েছে। ’
তিনি বলেন,আমাদের কথা হচ্ছে আমাদের নীতিমালার যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে, যারা সেই নির্দেশনাগুলো পুরণ করতে পারবেন এবং সেই স্কুলগুলো যেগুলোর আসলে প্রয়োজন আছে সেটা বিবেচনা করেই আমরা এমপিও ভুক্ত করবো। কাজেই যারাই এমপিও ভুক্তি চান তাদের এই নির্দেশনা মানতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে আমরা করে দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু ঐ নীতিমালাগুলো পূর্ণ করতে হবে এবং সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। যদি এমপিও ভুক্তির এই সুযোগটাকে অব্যাহত রাখতে চান।’
২ হাজার ৭শ’ ৩০টি এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩৯টি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৯৫টি মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ৯৩টি কলেজ, ৫৬টি ডিগ্রী কলেজ, ৫৫৭টি মাদ্রাসা এবং ৫২২টি কারিগরি শিক্ষা ইনস্টিটিউশন রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রী ডা.দীপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমপিও ভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রতি ধন্যবাদ এবং এমপিও ভুক্ত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটা দীর্ঘদিনের একটা চাহিদা ছিল। আমরা এই নিয়ে অনেক দিন থেকেই কাজ করছি। সবাই মিলে কাজ করে একটা তালিকাভুক্ত করে আজ এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারলাম।’
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমপিওভুক্তি নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘আগে যারা এমপিওভুক্ত ছিল তাদের বেতনের টাকাটা সরাসরি ওই প্রতিষ্ঠানে চলে যেত। যার ফলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে একটা নালিশ আসত, যে তারা ঠিকমতো বেতন পায় না।’
তিনি বলেন,‘তখন আমরা ঠিক করি যে, যার যার বেতন তার তার কাছে সরাসরি চলে যাবে এবং প্রতি মাসে একটা পেমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে যার নামে তার টাকার চেকে পৌঁছে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা করে একটা সুবিধা হলো যে দেখা গেল প্রায় ৬০ হাজার ভ’য়া শিক্ষক ছিল, যাদের নামে টাকা যেত।’
তিনি আরো বলেন,‘যখন আমরা প্রতিজনের নামে মাসিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে শুরু করলাম তখন এই ৬০ হাজার শিক্ষকের আর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না।’
‘যত্রতত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে শিক্ষার সঠিক মানটা আর বজায় থাকে না,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘প্রচন্ড একটা দাবি ছিল এমপিওভুক্ত করনের, আর এজন্য শিক্ষকরা আন্দোলন ও করেছেন। তখন আমরা বলেছি আমরা সবই করবো। কিন্তু একটা নীতিমালার ভিত্তিতে করবো।’
তিনি বলেন, শিক্ষাকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দেই বলেই একে একটি নীতিমালার ভিত্তিতে করতে চেয়েছে সরকার। যাতে মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। তবে, এই নীতিমালা ঠিক করে একে যাচাই বাছাই করে তালিকাটা করতে একটু সময় লেগে যায়।
তিনি বলেন,তাঁর সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, দেশের বাজেট বৃদ্ধি করে শিক্ষা খাতে সর্বাধিক ব্যয় বরাদ্দ করেছে, যাতে করে শিক্ষাকে আধুনিক এবং বিজ্ঞান সম্মত করে যুগের চাহিদা মোতাবেক প্রযুক্তি নির্ভর করে তোলা যায়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ রুম এবং কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিয়ে এবং ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে ঘরে বসে উপার্জনের জন্য তাঁর সরকারের ’লার্নিং এন্ড আর্নিং কর্মসূচি’ চালু, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষা সম্প্রসারণ ও যুগোপযোগী করনে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার বক্তৃতার উদ্বৃত করে শিক্ষকদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁদেরকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত সোনার ছেলে-মেয়ে তৈরীর আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সোনার ছেলে-মেয়ে যেন তৈরি হয় সেই দায়িত্বটা শিক্ষকদের ওপরই বর্তায়। কারণ শিক্ষকরাই তো মানুষ গড়ার কারিগর। কাজেই তারা সেটা করবেন। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
শিক্ষার্থীরা স্কুল পর্যায় থেকেই যাতে কারিগরি শিক্ষা বা ভোকেশনাল ট্রেনিং নিতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রেখে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আামদের ছোট-ছোট বাচ্চাদের ভেতরে অনেক মেধা লুকিয়ে আছে। তারা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। সেটা বিকাশের একটা সুযোগ আমাদের করে দেয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘শুধু উচ্চশিক্ষা নিয়ে, ডিগ্রি নিয়ে তো লাভ নাই। তাকে তো কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু করে খেতে হবে। সেটার ব্যবস্থা যাতে করতে পারি, যা দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক। সেটাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সেভাবেই আমরা করে যাচ্ছি।’