প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও নৈপুণ্য আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।এই ধারাবাহিকতায় আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের সুরক্ষায় লেবুখালীতে আরও একটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবে দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অধিকতর যুগোপযোগী করে গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সম্পদ। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে পেশাগতভাবে আপনাদের আরও দক্ষ ও কল্যাণমুখী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সেনা সদস্যদের উর্ধতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘১০ পদাতিক ডিভিশনের গঠন সম্পূর্ণ করতে এই ডিভিশনে ২টি ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডসহ ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নবগঠিত ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের প্রত্যেক সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই দিনটি অত্যন্ত আনন্দ ও পরিপূর্ণতার দিন। এক বছর আগে আমি যখন ১০ পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন করি, সে সময় এখানে প্রয়োজনীয় কোন স্থাপনা ছিল না। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই নবগঠিত গ্যারিসনের যে সম্পূর্ণ রূপ আমি দেখলাম তা আমাকে আশ্বস্ত করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই অঞ্চলে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রামু সেনানিবাসে একটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিলেন। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী সমগ্র দেশকে তিন অংশে বিভক্ত করেছে। এ জন্য সেনাবাহিনীকেও এভাবে ৩টি স্বতন্ত্র ও দক্ষ কমান্ডে নিয়োজিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যেক সদস্যের নৈতিক ও মননশীলতার বিকাশ ও পেশাগত উৎকর্ষের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই আলোকে আমরা ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (এএফএমসি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পিস সাপোর্ট অপারেশন্স এ্যান্ড ট্রেনিং (বিআইপিএসওট), এনসিওস একাডেমি, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার (বিআইআরসি) প্রতিষ্ঠা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতি বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সেনাবাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করি। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য ১টি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।
সহস্র্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে আমাদের সাফল্য বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একইভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নেও আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
নতুন এই ১০ পদাতিক ডিভিশনের উন্নয়নে এ ডিভিশনের সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি এরই ধারাবাহিকতায় আপনারা পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ১০ পদাতিক ডিভিশনকে অপারেশনাল, প্রশাসনিক এবং প্রশিক্ষণে একটি অনুকরণীয় ডিভিশনে পরিণত করার এই প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিজয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্র সম্পদ রক্ষা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে সরকার রামুতে সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী রামু সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারোয়ার হাসান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী ১০ পদাতিক ডিভিশনের নির্মিত বীর সরণি, অজেয় স্মৃতি ফলক, বীরাঙ্গনা বহুমুখী শেড এবং আলীকদম সেনানিবাসে মাতামুহুরী নামে একটি কম্পোজিট ব্যারাক উদ্বোধন করেন। তিনি রামু সেনানিবাসে ৪টি এসএম ব্যারাকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উর্ধতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।