নিজস্ব সংবাদদাতা- পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবের বেধে দেওয়া কোটা নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। সরকার সৌদি কর্তৃপক্ষকে কোটা বাড়াতে রাজি করাতে পারছে না বলে জানা গেছে। সরকারের ভাষ্য, সৌদি সরকার কোটা না বাড়ালে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লির এবার হজে যাওয়া হবে না। তবে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সংশ্লিষ্টদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি সরকার এবার বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন। এর মধ্যে ১০ হাজার হজযাত্রীকে রাখা হয় সরকারের অধীনে। বাকি ৯১ হাজার ৭৫৮ জন যায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার এক লাখ ১১ হাজার ১২ জন হজে যেতে ব্যাংকে ফি জমা দিয়েছেন। কোটার চাইতে ৯ হাজার ২৫৪ জন বেশি। এবার তারা হজে যেতে পারছেন না। টাকা জমা দিয়ে হজযাত্রীরা গত ১ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন করেন। হজ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (হাব)-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার জানান, রেজিস্ট্রেশন তথা ডাটা এন্ট্রি করেননি অথচ ফি জমা দিয়েছেন এমন মুসল্লি রয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার ব্যক্তি এবার আবেদন করেছেন। কোটার কারণে এদের প্রায় ৩০ হাজার হজে যেতে পারবেন না।
তিনি বলেন, প্রথম থেকে আমরা বলে আসছি বাংলাদেশের কোটা বাড়াতে সরকার যেন উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সরকার তা করতে পারেনি। তিনি বলেন, এক লাখ ৩০ হাজার মুসল্লিকে এবার হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে তারা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। হজ নিয়ে সৃষ্ট অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ও রেজিস্ট্রেশনের নতুন পদ্ধতি চালুসহ চারটি কারণে এ বছর হজের জন্য নিয়তকারীর সংখ্যা বেড়েছে। মন্ত্রী বলেন, মক্কা শরীফের পবিত্র মসজিদুল হারামে সংস্কার কাজ চলতে থাকায় হজ ও ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা সৌদি সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখছে। চলতি বছর হজ চুক্তির সভায় বাংলাদেশের কোটা বাড়াতে আমি প্রস্তাব করেছি। ভারত, মালয়েশিয়া ও ইরানসহ কয়েকটি দেশও কোটা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সৌদি সরকার কোনও দেশের কোটা বাড়িয়েছে বলে আমার জানা নেই। মন্ত্রী বলেন, চলতি বছর নিবন্ধন করেও যারা হজে যেতে পারবেন না, তাদের আমি অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি। ২০১৬ সালের হজে এবারের নিবন্ধিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ধর্ম সচিব চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান বলেন, এবার প্রথম কোটার চেয়ে আবেদনের সংখ্যা বেশি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি ব্যবস্থাপনার ৭ হাজার হজযাত্রী বেসরকারি এজেন্সিগুলোর অনুকূলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে সরকারের কাছে সংরক্ষিত কোটা থাকবে তিন হাজার। জানা গেছে, সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২২ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা আছে। বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হবে ১৬ আগস্ট। হজফ্লাইট শেষ হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২৭ সেপ্টেম্বর এবং শেষ হবে ২৮ অক্টোবর। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর আওতায় হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৫ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এর আওতায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা।