অগ্রসর রিপোর্ট: আজ স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৮তম বছর। আজকের দিনের স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর: ৪৮ বছর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য খুব দীর্ঘ সময় এই দাবি আমি করব না। বিশ্বের অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রই পুরোপুরি সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত বেশ সময় লেগেছে। বাংলাদেশ সেদিক থেকে সুযোগ গ্রহণ করতে পারত, যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অশূভ চক্রের আভির্ভাব না ঘটতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে লক্ষ নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার সেই লক্ষ্য হয়ত এর অনেক আগেই পূরণ হতে পারতো যদি তিনি বেচে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন মূলত একটি অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে, যে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। যে বাংলাদেশে শ্রেণী বৈষম্য থাকবে না। যে বাংলাদেশের মানুষ মাথা উচু করে উন্নত বিশ্বে গর্ববোধ করতে পারবে বাংলাদেশকে নিয়ে। যে বাংলাদেশে কোন দুর্ভিক্ষ থাকবে না, বেকার যুবক থাকবে না, যে বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না, সমাজে অন্যায় থাকবে না। বাংলাদেশে কোন শোষন থাকবে না কারন এই শোষনের বিরুদ্ধে, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে , পশ্চিম পাকিস্তানের শোষন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এ লক্ষ্য নিয়ে আমাদের বিশ্ব নন্দিত সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ও সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে।
বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র স্বাধীনতা অর্জন নয়। তার মুল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জনের পর এই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের জন্য একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সেই জায়গা বঙ্গবন্ধু তার যাত্রা শুরু করেছিলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রাম বা স্বাধীন বাংলাদেশ বা স্বাধীনতার পতাকা এবং বাংলাদেশের সংবিধান যারা মেনে নিতে পারেনি তারা পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজোট হয়ে দেশী এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সহায়তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে প্রায় স্বপরিবারে হত্যা করে। এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে একটি স্বপ্নের একটি স্বপ্নের বাংলাদেশকেই হত্যা করা হয়েছিল।
এরপর দীর্ঘ ২১ বছর উল্টো শ্রোতে চলতে হয়েছে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ এবং এই ভূখন্ডের জনগোষ্ঠীকে। ২১ বছর শ্রোতের বিপরীতে বাংলাদেশ যে ভাবে পরিচালিত হয়েছে সেই জায়গা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন একটি বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছিল। পরবতীর্তে বঙ্গবন্ধু হত্যার ৬ বছর পরে জাতির পিতার সুযোগ্য কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে পা রাখেন এবং তিনি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নতুন করে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে আওয়ামীলীগ আবার সরকার গঠনের সুযোগ পায়। পরে আরো একবার আওয়ামীল সরকার ধাক্কা খেলেও যে স্বপ্ন নিয়ে যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ কে স্বাধীন করেছিলেন, যেভাবে দেশটি গড়তে চেয়েছিলেন বতর্মান প্রধানমন্ত্রী তা অনেকটাই ফলপ্রসু বা বাস্তবায়ন করেছেন। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু আদর্শ পুরো জাতির মধ্যে প্রথিত হবে এবং এই জাতি আর কখনো বিভ্রান্ত হবে না। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ধারন করে বাংলাদেশকে নিজেদের মতো করে গড়বে এবং বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারের নিজেদেরকে উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠত করবে ।
অগ্রসর: আপনি জানেন ৪৮ বছরের মধ্যে আওয়ামীলীগ ইতিপূর্বে মাত্র ১৮ বছর ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটুকু সফলতা পেয়েছেন বলে আপনি মনে করেন।
শাবান মাহমুদ:
বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের নের্তৃত্বদানকারী অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশেরই নেতা ছিলেন না, তিনি এশিয়ার গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব-নন্দিত নেতায় পরিনত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু আলোকিত বিশ্বনন্দিত নেতা। দলের নেতা কমীদের প্রাণের চেয়ে ভালোবাসতেন। অতিমাত্রায় সহজ সরল এবং বিশ্বাস থাকায় তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের নীল নকশা থেকে নিজেকে এবং পরিবার পরিজনদের রক্ষা করতে পারেননি।
কিন্ত শেখ হাসিনা দূর থেকে তা অবলোকন করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঠিক সেই ভাবে বিশ্বস্ত নেতা-কর্মী সৃষ্টি করেছেন এবং সেইভাবেই দেশ পরিচালনা করছেন এবং সফল হয়েছেন। সময়ের স্বলপতার কারণে হয়তো বঙ্গবন্ধুর কিছু স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়ন হয়নি তবে বর্তমান সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
আমি মনে করি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজেকে সফলভাবে আভির্ভূত করতে পেরেছেন। ক্ষুদা দারিদ্রকে দূর করে, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে জীবনযাত্রার সকল সূচক ঊর্ধ্বগতি বজায় রেখেছে। ঋনের দিকে চেয়ে না থেকে বিশ্বকে অবাক করে পদ্মাসেতুর মতো ম্যাগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। উন্নয়নের মডেল হিসেবে বাংলাদেশ এখন একটি উদাহরন যার কৃতিত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। বঙ্গবন্ধুর সকল স্বপ্নই ইনশাআল্লাহ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করবেন।
অগ্রসর:
আপনার দৃষ্টিতে আমাদের গণমাধ্যম স্বাধীনতার পর সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কতটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পেরেছে? গণমাধ্যমের বর্তমান সমস্যা কি? কিভাবে তা সমাধান করা যায়।
শাবান মাহমুদ
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিগত ৪৮ বছরে এর আগে গণমাধ্যম এটতা স্বাধীনতা ভোগ করেছে বলে আমার জানা নেই। আমি মনে করি গণমাধ্যম এখন পুরোপুরি স্বাধীন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সর্বতভাবে ব্যবহার করছে। বেসরকারি ইকেট্রনিক মিডিয়া অর্থাৎ টেলিভিশনে যারা ‘টকশো’ তে অংশ নিচ্ছেন তারা স্বাধীনভাবে নিজের কথা বলতে পারছেন। সরকার চাপ প্রয়োগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করছে না। তবে হ্যাঁ ডিজিটাল আইনের ২/১টি ধারা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ তথ্য ব্যক্তিগতভাবে আমারও ভিন্নমত রয়েছে। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এসমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।