আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রজতজয়ন্তী ও সপ্তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিসত্তার নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে ঘর ছাড়তে, দেশান্তরি হতে বাধ্য হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সরকার ও নাগরিক সমাজ মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করছে তা বহু দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমত সহিষ্ণুতাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ‘শ্রেষ্ঠ উপাদান’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, কোনো অপশক্তি এই গৌরবময় অর্জনকে ম্লান করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমাদের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ শুধু সংরক্ষণ নয়, এর বিকাশও ঘটাতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্মই নরহত্যা, সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ সমর্থন করে না। সকল ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা এবং সমাজ ও মানুষের কল্যাণ।
স্বাধীনতার দুই দশক পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন গড়ে ওঠা এবং সেই আন্দোলনে শহীদ জননী জাহানার ইমামের অবদানের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন করতে এ আন্দোলন বিশাল ভূমিকা পালন করে। আজ আপনারা এই আন্দোলনের রজতজয়ন্তী উদযাপন করছেন। গত ২৫ বছরে অনেক ঝড়ঝাপটা আপনাদের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। কিন্তু শত বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল থেকে আপনারা এই সময়ে অনেক অর্জনও করেছেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে বহু প্রতীক্ষিত সেই বিচার কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। সে সময় আবদুল হামিদ ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।
সেদিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে পুনরায় এই বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৯ সালে মহান জাতীয় সংসদে ১৯৭১ এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। আমার সৌভাগ্য, তখন আমি স্পিকারের চেয়ারে আসীন ছিলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে। বাঙালি আজ ‘অনেকটা’ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে এ অনুষ্ঠানে ৫ শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দেওয়া হয়। শহীদজায়া লিলি চৌধুরী, পান্না কায়সার, শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, সুচন্দা রায়হান ও সারা মাহমুদকে উত্তরীয় ও ক্রেস্ট দেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রজতজয়ন্তী ও সপ্তম সম্মেলনের সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি গোলাম রব্বানী। অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নর্থ আমেরিকা জুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি উইলিয়াম স্লোন, ফোরাম ফর সেকুলার নেপালের আহ্বায়ক যুবনাথ লামসাল, সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী এরিক হুদলান্দ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।