অগ্রসর রিপোর্ট : সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন (ভোট) হবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসের (৯০ দিন) মধ্যে। এমন বিধান রেখে ‘স্থানীয় (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইনে’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বর্তমান আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর। আর কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ছয় মাসের (১৮০ দিন) মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সংশোধিত এই আইনটি পাস হলে সিটি করপোরেশন এলাকায় বৃষ্টিজনিত পানির ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজটি করবে সিটি করপোরেশন। এখন এক ধরনের চুক্তির মাধ্যমে এই কাজটি সিটি করপোরেশন করছে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘স্থানীয় (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইনে’র খসড়া অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের সচিবের পদের নাম পরিবর্তন করে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। এই পদটি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা’র’ নিচের পদ হবে।
মেয়র ও কাউন্সিলরদের বছরের ছুটিও কমানো হচ্ছে। খসড়া অনুযায়ী, এখন মেয়র ও কাউন্সিলরদের ছুটি হবে বছরে এক মাস। এতদিন তাঁরা তিন মাস পর্যন্ত এই ছুটি নিতে পারতেন। এ ছাড়া আগে কোনো কাউন্সিলেরর পদ ছুটিজনিত বা কোনো কারণে শূন্য হলে, পাশ্ববর্তী ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের ওই সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হতো। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শূন্য হলে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এই দায়িত্ব পালন করবেন।
সিটি কর্পোরেশনভুক্ত কোন ব্যক্তি মালিকানা বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানার রাস্তা যথাযথভাবে সংস্কার বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা হলে, জরিমানা করার ব্যবস্থা থাকবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইনে’র খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী, নতুন ইউনিয়ন হলে বা পুরোনো ইউনিয়নের মেয়াদ শেষ হলে, সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হলে, নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি বাড়তি সময় থাকতে পারবেন না। এতদিন গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে কার্যভার নেওয়ার নিয়ম ছিল। এখন শপথের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রথম সভা করতে হবে। এ ছাড়া ইউনিয়নর পরিষদের সচিবের পদটি পরিবর্তন করে ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালের ভাতা পাবেন। তবে তারা বিদেশে থাকা বা অন্য কোন কারণে দায়িত্ব পালন না করলে, ভাতা পাবেন না।
সভায় ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০২৩’র খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নারী শ্রমিকদের প্রসুতিকালী ছুটি বৃদ্ধি করে ১২০ দিন করা হয়েছে। আগে এই ছুটির পরিমান ছিল ১৬ সপ্তাহ বা ১১২ দিন। প্রসুতি নারী শ্রমিকরা প্রসবের আগে ৮ সপ্তাহ এবং প্রসবের পরে ৮ সপ্তাহ ছুটি ভোগ করতেন। এখন থেকে প্রসুতি নারী শ্রমিকরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ছুটি ভোগ করতে পারবেন।
এছাড়াও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজারের কম হলে ২০ শতাংশ এবং তিন হাজারের বেশি হলে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষর থাকতে হবে। তবে গ্রুপ কোম্পানীর ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। আগে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হতো।
কোন সংক্ষুদ্ধ শ্রমিক শ্রম আদালতে মামলা করে থাকেন। শ্রম আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে, ওই শ্রমিক শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপীল করতে পারেন। তারপরও সন্তুষ্ট না হলে, তারা হাইকোর্টে রীট করে থাকেন। এখন থেকে কোন শ্রমিক আপীল করতে চাইলে, তাকে হাইকোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে কোন শ্রমিকের ওপর বৈষম্য করা যাবে না এবং শোভন কর্মপরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
সভায় বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পতি অর্জন) নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০২৩’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সম্পতি ক্রয়, বিনিময় বা অন্য কোন উপায়ে সরকারের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তির মালিক হতে পারবে না। আগে শুধু সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হতো।
এছাড়াও সভায় ‘পায়রা-কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৩’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ১৫ সদস্য নিয়ে একটি বোর্ড থাকবে। অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো এই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ৩৩তম পারমানবিক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রিসভা। এছাড়াও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্ভোধন করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রীসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পায়রা-মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের গভীরতা ১৮ দশমিক ৫ মিটারের বেশি। এই বন্দরটিকে গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।