স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি’র দাবি অত্যন্ত হাস্যকর। কারণ, দেশের মানুষ তাদের জন্ম, গণতান্ত্রিক আচরণ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভাল করেই জানে।
শেখ হাসিনা বলেন, একজন সামরিক স্বৈরশাসক দেশের সংবিধান ও সামরিক আইন লংঘন করে বিএনপি প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সারাজীবন ভোট কারচুপি করেছেন। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং অন্যান্য নির্বাচনে ভোটার বিহীন নির্বাচন করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে জেলার লৌহজং উপজেলার উত্তর মেদিনি মন্ডলে খানবাড়িতে এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণদানকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মূল কাজের নির্মাণ এবং নদী শাসনের কাজ উদ্বোধন উপলক্ষে জেলা সফরকালে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জন সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর মাত্র দেড় মাসের মধ্যে জনগণ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল। এখন তারা নির্বাচন সম্পর্কে নানা নীতি বাক্য শুনাচ্ছেন যা জনগণের সঙ্গে উপহাস ছাড়া কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জন্ম থেকেই একটি অবৈধ দল। তারা শুরু থেকেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ধংস করার সব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করে আসছে। তারা কি করে বৈধ কিছু করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির সহ পদ্মা সেতুর উন্নয়ন কাজও স্থগিত করেছিল। তিনি বলেন, বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সংসদ সদস্য হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য, এখন আমাদেরকে বিএনপি’র কাছ থেকে নির্বাচন সম্পর্কে কোনটি সঠিক কোনটি ভুল সে কথা শুনতে হয়। যে দল জানে না জনগণের কল্যাণে কিভাবে কাজ করতে হয়; তারা শুধু জানে কিভাবে ধ্বংস করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করেছে। তারা প্রায় ১৫০ জন নিরীহ মানুষ, ৫৫ জন বাস চালক ও হেলপার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। শত শত পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ছাই করেছে, এমন কি মসজিদের অভ্যন্তরে মুসুল্লীদেরকে হত্যা করেছে।
বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একই ধরনের নৃশংসতা করেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা সরানোর লক্ষ্যে চলতি বছরের প্রথম তিন মাস সহিংসতা চালিয়েছে। বিএনপি কর্মীরা খালেদা জিয়ার প্ররোচনায় নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদেরকে পুড়িয়ে মেরেছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দলের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমীর হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং নুহ-উল আলম লেনিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং আহমেদ হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি, ও সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিও বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ এবং নদী শাসনের কাজের উদ্বোধন করেন এবং একটি বোটে করে পদ্মা নদীতে সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসংযোগ, হত্যা এবং সন্ত্রাসের অভিযোগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বিএনপি’র দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, তারা জীবন্ত মানুষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোন অপরাধী ছাড় পাবে না। মানুষ হত্যার জন্য দায়ীদের এবং তাদের অর্থ যোগানদাতাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
পদ্মা সেতুকে জনগণের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীর সাথে যুক্ত করবে এবং জনগণের জন্য ব্যাপক অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করবে।
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি এই প্রকল্পটি স্থগিত করেছিল এবং তারা অন্যত্র সেতুটি নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ার পরও তাঁর সরকার বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণের লক্ষ্যে বিশাল এই প্রকল্পটি অব্যাহত রেখেছে, কেননা একটি বিজয়ী জাতি যেকোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হবে বাঙ্গালির গর্বের প্রতীক, যারা কখনো কারও কাছে পরাজিত হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না। জনগণই বিচার করবে ওই সময় দেশের কি অগ্রগতি হয়েছিল। কিন্তু যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশ এগিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ সরকার মোবাইল টেকনোলজি ও ইন্টারনেট সেবা জনগণের জন্য সহজলভ্য করেছে, টেলিফোন ব্যবস্থাকে এনালগ থেকে ডিজিটাল করেছে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বৃদ্ধ, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীদের ভাতা চালু করেছে আওয়ামী লীগ।
গৃহহীন জনগণকে আবাসস্থল দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার ‘আশ্রয়ন’ ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্প চালু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিভাবকদের অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর লক্ষ্যে সরকার বিনামূলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছে এবং গরীব শিক্ষার্থীদেরকে ¯œাতক পর্যায় পর্যন্ত উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের আসল লক্ষ্য দেশের জনগণকে একটি সমৃদ্ধ জীবন দেওয়া এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে দেওয়া।
তিনি বলেন, সকল কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে তা আরও বাড়বে।
বর্তমানে একজন দিন মজুর তার দৈনিক উপার্জন দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে পারে এবং এগুলোর সবই সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির কারণে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেক জনগণের লাভ ও কল্যাণের জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশ সরকারই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এটা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণের লক্ষ্যে করা হয়েছে এবং আমরা দেশের দ্রুত অগ্রগতি চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অন্যদিকে, স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামাত জোট দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির আহ্বান জানান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে কোন ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।