অগ্রসর রিপোর্ট : চলতি জুলাই মাসে ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানী অধিকাংশ হাসপাতাল।
এদিকে শুক্রবার (৮ জুলাই) রাজধানীর মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ডাক্তার, নার্স ও বেড সংকটে ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। বেডের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মেঝেতে।
রাজধানীর আসাদগেট থেকে আসা বরকত উল্লাহ ডেঙ্গুজ্বরে ভর্তি হয়েছেন এ হাসপাতালে। বেড না পাওয়ায় তার স্থান হয়েছে দুই বেডের মাঝখানে মেঝেতে।
তিনি বলেন, মেঝেতে শুয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার ঠিকমত দেখছেন না। আসলে আমাদেরতো কিছু করার নাই।
মান্ডার আলামিন হাওলাদারসহ বহু রোগীর স্থানই হয়েছে দুই বেডের মাঝখানে বা ফ্লোরে গাদাগাদি করে।
আলামিন বলেন, এখানে রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নেই। রোগীর চাপ অনেক। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঠিকমত ডাক্তাররা দেখতে পারছেন না।
ডাক্তার ও নার্স সংকটের কথা উল্লেখ করে আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এখনো প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ডায়রিয়া, অল্প জ্বর বা জ্বর না থাকা, দুই তিন দিন ধরে বমি, মস্তিষ্কে প্রদাহ, বুকে ও পেটে পানি জমে যাওয়া, অসহ্য রকমের পেটব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসছেন রোগীরা। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্তরাই এসব লক্ষণ নিয়ে আসছে। এদের জটিলতা বেশি।
পাঁচশো শয্যার এ হাসপাতালে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা দিগুনেরও বেশি। শুধু ডেঙ্গু রোগী সংখ্যায় ৪৩৬ জন। পাঁচজন নার্স সেবা দিচ্ছেন দুইশোর বেশি রোগীকে। সংশ্লিষ্ট জনবল বাড়াতে এবছরের ৩১ জানুয়ারি, ১২ মার্চ, ১৯ এপ্রিল ও চার জুলাই মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করলেও সাড়া মেলেনি।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও দেখা যায়, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে। পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, রোগী বাড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তারা এরই মধ্যে আগাম প্রস্তুতি রেখেছেন।
শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই ব্যাপকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ময়মনসিংহ, বরিশাল, নড়াইল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আর রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৮৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৯০ জন।
শুক্রবার মুগদা হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৪৬ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২৪, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭০, শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে ৩৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৭১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ এবং ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে ২০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
এছাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩১ জন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ৩১ জন, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইল শাখায় ৬১ জন, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জন এবং আজগর আলী হাসপাতালে ৬৪ জন ভর্তি আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন, মারা গেছেন দুজন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬০৩ জন ও ঢাকার বাইরের ২১৭ জন।
এবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ১১৮ জন। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৭৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৪৪ জন। একই সময়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৯ হাজার ৫৪৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৬ হাজার ৭৫০ জন এবং ঢাকার বাইরের ২ হাজার ৭৯৯ জন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের আট দিনেই মারা গেছেন ২০ জন। এডিস মশা নির্মূলে শুক্রবার থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন শুরু হয়েছে।
এদিকে অভিযানে লার্ভা পাওয়ায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিকে ৫ লাখ টাকাসহ ১৭টি মামলায় মোট ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অন্যদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে রোববার (৯ জুলাই) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় ডেঙ্গুভীতি নিয়েই ক্লাসে যাবে শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে কোমলমতি শিশুরা।
সরকারি তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ছুটির শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খোলার আগে ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।