অগ্রসর রিপোর্ট : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ডিভোর্সসহ নানাবিধ সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ছাত্রদেরকে উদ্যোগী হয়ে জোর অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডিভোর্স সংস্কৃতি, বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁকসহ সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা জোরদার করতে গ্রাজুয়েটদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। রাষ্ট্রপ্রধান আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমানে দেশে ডিভোর্সের হার অনেক বেড়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। কেননা আমাদের কালচারে এমনটা হবার কথা নয়। সামাজিক অবক্ষয় দূর করার জন্য তোমাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে। তোমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ আসলেই ভালো হবে না। তিনি কোমল পানীয় এবং ফাস্টফুড খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন চিকিৎসা বলেন এটা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্ষ্ঠুু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা মূল্যায়ন, ক্যারিকুলাম প্রণয়ন ও টিউশন ফি নির্ধাণসহ সকল বিষয়ে নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষা কোন বাণিজ্যিক পণ্য নয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন তাদেরকে সব নিয়মনীতি মেনেই চালাতে হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসার চাই। তবে সার্টিফিকেটসর্বস্ব উচ্চশিক্ষা চাই না। তাই প্রয়োজনে ইউজিসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে সুনিদিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং উচ্চশিক্ষার গুণগুত মান নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখলেও সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বা সব উদ্যোক্তাই যে নিয়মনীতি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন তা নয়। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশের বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আবদ্ধ বাণিজ্যিক ভবনে পরিচালিত হয় যা উন্মুক্ত জ্ঞানচর্চার পথে বড় অন্তরায়। তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী রোলমডেল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, কখনও মিথ্যা ও অন্যায়ের সাথে আপোস করবে না। সর্বদা বিবেককে জাগ্রত রাখবে। মনে রাখবে, ব্যক্তির দুষ্কর্মের ফল ব্যক্তি একা ভোগ করে না বরং সমগ্র জাতিকে তা ভোগ করতে হয়। আমাদের নবীন গ্র্যাজুয়েটগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির কল্যাণে অবদান রাখবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
সমাবর্তনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সমাবর্তন বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ৭০৬ জন পোস্টগ্রাজুয়েটসহ ১৬২০ জন গ্রাজুয়েট ডিগ্রি সনদ গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ।