বখে যাওয়া থেকে সন্তানদের রক্ষায় তাদের ওপর বাবা-মা ও অন্য অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে সন্তানদের জন্য আলাদা সময় বের করার জন্য বাবা-মায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্তানেরা কী করে, কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে—এসব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতা ও অভিভাবকের দায়িত্ব; যাতে তারা কোনো ভুল পথে পা না বাড়ায়।’ সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের একাংশ, যাদের পরিবার তাদের কোনো অভাব-অভিযোগ অপূর্ণ রাখেনি, তারাই ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, তাদের কোনো একটা চাওয়া-পাওয়ার অপূর্ণতাও তাদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে।’
সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি তাদের জন্য পিতা-মাতাকে আলাদা সময় বের করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সন্তানের সব ভালো-মন্দের দিকে নজর রাখবেন। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষায় যেন তারা শিক্ষিত হতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় জনগণের শক্তিকেই মূল শক্তি উল্লেখ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের আধুনিক প্রযুক্তি
ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনের ওপরও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর ধরনও বদলেছে। এ কারণে প্রত্যেক বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি এ অশুভ শক্তিকে দমনে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার একদিকে যেমন আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে, অপর দিকে ধ্বংসাত্মক কাজে এগুলোর ব্যবহার মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সব বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি এগুলো ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু তাঁর সরকার করবে।
এসএসএফ সদস্যদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ফোর্স তাদের অন্তর্ভুক্তিকাল থেকেই উচ্চ মানসিক শক্তি, সর্বোচ্চ আনুগত্য ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এই বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে আগামী দিনগুলোতেও দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের বিদায়ী হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের বিদায়ী হাইকমিশনার সুজা আলম।
সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন হাইকমিশনার সুজা আলম। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে পাকিস্তান শিক্ষা নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের শুভেচ্ছা ছাড়াও নভেম্বরে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে নওয়াজের আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও হাইকমিশনারের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফকে তাঁর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।