আজ রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দক্ষতা, নিয়োগযোগ্যতা এবং শোভন কাজ’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে নিজ নিজ কারখানায় চাহিদামাফিক যোগ্য কর্মী গড়ে তুলতে কর্মীদের প্রশিক্ষণের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে শিল্প মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। এ ছাড়া নতুন নতুন শিল্প গড়ে তুলতে তরুণদের গিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৈরি পোশাক রফতানি করে আমাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই। তবে সে আয় সীমিত সংখ্যক বৈদেশিক বাজারেই সীমাবদ্ধ। আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য পণ্যের বৈচিত্র্য এবং পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। সরকার পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে শুধু প্রণোদনাই যথেষ্ট নয়, মূলধন ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলিকে উন্নততর উৎপাদনশীলতার উপর ভিত্তি করে পুনবির্ন্যাস করতে হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল কর্মবিশ্বে উদ্ভাবন শক্তি, সৃজনশীলতা ও কাস্টমাইজড উৎপাদনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রস্তত থাকতে হবে। তখনই কেবল বিশ্বব্যাপী পণ্য ও সেবার ধারাবাহিক সারবরাহে আমরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পাররো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ শ্রমশক্তির পাশাপাশি দক্ষ ব্যবস্থাপক ও দক্ষ পেশাজীবী তৈরির মাধ্যমে এক্ষেত্রে বিরাজমান পরনির্ভরশীলতা দূর করে জাতীয় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিল্পের চাহিদার সমন্বয় ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের অতি ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। একটা সময় ছিল যখন কৃষিই ছিল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শুধু কৃষিখাত এই বিপুল জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা মেটানো সক্ষম হচ্ছিল না। তাই ধীরে হলেও আমাদের অর্থনীতি শিল্প এবং সেবাখাতের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমবাজারে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর প্রবেশ করছেন, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং সেবাখাতের প্রসার। বর্তমানে আমাদের জিডিপির প্রায় ৫৪ শতাংশ সেবাখাত, ৩০ শতাংশ শিল্প খাত এবং ১৬ শতাংশ কৃষিখাত থেকে আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমাদের সামনে এখন এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ। দক্ষ জনশক্তির যোগান বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উপার্জন সক্ষমতা অর্জন ও আয়বৃদ্ধি দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তক হবে। যা অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলোকে কাক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করবে।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, মূলধন ব্যয় কমানো, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব বিষয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সহজীকরণ, বন্দর সুবিধা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করে দক্ষতা প্রশিক্ষণের পরিধি বিস্তার, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিস্তারে নতুন নতুন অবকাঠামো সৃষ্টি, বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। অর্থের যোগান সহজ করার লক্ষ্যে সরকার জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে।