গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত রাজধানীর শেওড়াপাড়ার সেই বাড়িটিতে মোট তিন থেকে চারজন থাকতো বলে জানিয়েছেন পাশের ফ্লাটের এক বাসিন্দা।
তিনি জানান, গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে দ্বিতীয় বারের মতো এখানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এর আগেও গত বুধবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে এখানে একবার অভিযান চালানো হয়।
শনিবার রাতে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৪৪১/৮ নম্বর বাসায় অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। অভিযানে বাড়ির মালিক নূরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। এই বাসাটিও গুলশান হামলায় জড়িত জঙ্গিরা ব্যবহার করেছিল বলে দাবি পুলিশের। ওই বাসা থেকে গ্রেনেড ও কালো পোশাক পাওয়া গেছে।
প্রতিবেশি ওই বাসিন্দা জানান, এর আগে বুধবার রাতে ৪টার দিকে ডিবি পুলিশ দুজনকে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে এসেছিল। সেসময় ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগানো ছিল। এসময় তালা ভেঙে একটি পাঞ্জাবি ও জায়নামাজ পান। তারা সেগুলো নিয়ে যান। এরপর বাড়ির মালিক সেখানে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর গতকাল রাতে ১২টার দিকে আরেকবার অভিযান চালিয়ে ঘরে গ্রেনেড ও কালো পোশাক পেয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। এরপর সেখানে পুলিশ একটি তালা লাগিয়ে দেয়।
একটি সরু গলি দিয়ে ভেতরে দিকে বাসাটি। পাঁচতলা এই ভবনের প্রতিটি তলায় তিনটি করে ফ্লাট রয়েছে। ভবনের নিচতলায় কলাপসিবল গেটের বাইরেই অভিযুক্ত ফ্লাটটি। নির্মাণাধীন ভবনটিতে গলি দিয়ে ঢুকেই ডানপাশের ফ্লাট এটি।
প্রতিবেশি বলেন, ‘ঈদের পরের দিনও ওই ফ্লাটে এক যুবককে দেখা গেছে। ফ্লাটটিতে সব মিলিয়ে তিন থেকে চারজনকে আসা যাওয়া করতে দেখেছি। তবে কারো সঙ্গে কথা হয়নি। তাদের বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ২২ বছর।’
নিচতলার আরেক ফ্লাটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘এখানে ঈদের তিনদিন আগেও ওই ফ্লাটের ভাড়াটিয়ারা ছিলেন। তারা প্রায় তিন মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। বেশিরভাগ সময়ই বাসাটির দরজায় বাইরে থেকে তালা দেয়া থাকতো।’ মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে তালা দেয়া থাকলেও ভেতরে লোক থাকতো বলেও দাবি করেন তিনি। এতে সন্দেহ দেখা দিলে তিনি বাড়ির মালিককেও জানিয়েছিলেন। জবাবে বাড়ির মালিক তাকে বলেন, ‘ওরা ছাত্র মানুষ, পড়াশুনা করে মনে হয়।’
তারা দেখতে কেমন ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নারী জানান, সবাই ওয়েল শেভড, ইয়াং ছেলে। দেখতেও ভদ্র ঘরেরই মনে হতো। অন্য বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, ফ্লাটের সবাইকে কলেজ পড়ুয়া মনের হয়েছে।
বাড়ির মালিক নুরুল ইসলাম মিরপুর আদর্শ স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক। তিনি এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম নেয়া হয়েছে কিনা -এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ভাড়াটিয়া বলেন, ‘আমাদের ভাড়াটিয়া ফরম নিয়েছেন। আর ওই ফ্লাটের একজনের তথ্য ও ফরম নিয়েছিলেন।’