অগ্রসর রিপোর্ট : বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তা দ্বিগুণ করার পাশাপাশি অপুষ্টি দূর করতে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
আজ সোমবার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে কিমের এই ঘোষণা আসে।
বিশ্বব্যাংক ৩ বছরের প্যাকেজে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) হিসেবে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে থাকে। এর অংশ হিসেবে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশকে ১ দশমিক ১৮ ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছিল বিশ্বব্যাংক।
বর্তমানে যে আইডিএ প্যাকেজ চলছে, তার মেয়াদ শেষ হবে আগামী অর্থবছরে। এরপর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের এই স্বল্প সুদের ঋণ-সহায়তার পরিমাণ এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন কিম।
তিনি বলেন, শিশু অপুষ্টি দূর করতে আরো ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হবে বাংলাদেশকে।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পর পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশ ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গেই আছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ ‘অসাধারণ’ সাফল্য দেখিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ কারণেই তিনি এবারের দারিদ্র্য বিমোচন দিবস বাংলাদেশ পালন করতে এসেছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রথম সফর এটি। বিশ্বব্যাংক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের যোগাযোগসহ সব খাতেই বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিয়ে থাকে। পদ্মা সেতুতে যে তহবিল বিশ্বব্যাংকের দেয়ার কথা ছিল তারা অন্যান্য প্রকল্পে সেটি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বিষয়টির সমন্বয় হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা।
৩ দিনের সফরে গতকাল রবিবার ঢাকায় এসেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য ও বিমোচনের কৌশল সরেজমিন দেখতেই বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
আজ ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’। দিবসটি এ বছর ঢাকায় পালন করছে বিশ্বব্যাংক। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ বেলা ৩টায় রয়েছে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গণবক্তৃতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি থাকবেন। এতে বিশেষ বক্তব্য দেবেন দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ পাওয়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার।
জনপ্রিয় শিল্পী হাবিব ওয়াহিদ ‘অ্যান্ড পোভার্টি’ শীর্ষক সংগীত পরিবেশন করবেন। ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে অনুষ্ঠানে। এরপর ‘২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নিরসন: বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায়ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বক্তব্য দেবেন। এই আলোচনায় আরও অংশ নেবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পল রোমার, অ্যাকশন এইড-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং মোহাম্মদী গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবানা হক।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে এমন কয়েকটি প্রকল্প দেখতে কাল মঙ্গলবার সকালে বরিশাল যাবেন জিম ইয়ং কিম। দুপুরে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং বিকেলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা ছাড়বেন।
জিম ইয়ং কিমসহ বিশ্বব্যাংকের এ পর্যন্ত পাঁচজন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক। এরও আগে আসেন পল উলফোভিৎজ, জেমস উলফেনসন ও রবার্ট ম্যাকনামারা।