তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শ্রমিক সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তখন তিনি গাড়িতে বসা ছিলেন। দুজন লোক সরু গলি দিয়ে রাস্তার দিকে হেঁটে আসছিলেন। তখন পুলিশ গুলি করলে ওই লোকের (শ্রমিক শাহিনুর) পেটে গুলি লাগে। তখনই তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে পুলিশ ওই লোকের ধারেকাছে কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি।’
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের আরও জানান, ঘটনার দিন পুলিশের ওপর আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা ইটপাটকেল ছুড়েছিলেন সত্য। কিন্তু কোনো শ্রমিককে গুলি করেননি। বরং পুলিশ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। আর পুলিশের ওই রাবার বুলেট লাগে শাহীনুরের শরীরে। এতেই তার মৃত্যু হয়।
মামলার এজাহারের বক্তব্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত বুধবার ৭০০ থেকে ৮০০ জন আসামি গাবতলীর আল্লাহর দান হোটেলের সামনের কারমাইকেল রোডে অবস্থান করেন। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জনগণকে রাস্তায় চলাচলে বাধা দেন। স্বাভাবিকভাবে রাস্তায় চলতে থাকলে আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা জনগণের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা বাস ভাঙচুর করেন। বাসে থাকা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। সেদিন সকাল ১০টার দিকে অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালালে একজন আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় একজন মারা যান।
শাহীনুর হত্যা মামলার বাদী এসআই এলিস মাহমুদ দাবি করেন, সেদিন শ্রমিকদের লক্ষ্য করে পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি। আন্দোলনকারী শ্রমিকেরাই সাধারণ জনগণের ওপর গুলি ছোড়েন। ওই শ্রমিকদের গুলিতেই শাহিনুর মারা গেছেন।
তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের আবাসিক সার্জন জেসমিন নাহার সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই শ্রমিকের বুকে ও পেটে অনেক ছররা গুলির জখম ছিল, শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর মামলায় এক বাসচালকের যাবজ্জীবন ও ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করে পরিবহনশ্রমিকেরা। পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এসআই ট্র্যাভেলসের চালকের সহকারী শাহিনুর রহমান (৩৭) সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এলিস মাহমুদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৭০০ থেকে ৮০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।