অগ্রসর রিপোর্ট : উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ চেতনাকে ধারণ করে দুর্গাপূজার সমকালীন সময়ে পরিণত হয়েছে সর্বজনীন উৎসবে।
বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবী দুর্গার বোধনের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আর শুক্রবার মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। ঢাক ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে সারাদেশের পূজামণ্ডপ। বছর ঘুরে দেবীর আগমনিবার্তায় উৎসবের আমেজ এখন বাঙালির প্রাণে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দেবীপক্ষকে। ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে সমাপ্ত হবে এই মহাউৎসবের। ইতোমধ্যে সারাদেশের সকল পূজামণ্ডপের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে আসেন। আর দেবী স্বর্গালোকে বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩২৪টি বেশি। আর রাজধানী ঢাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হবে ২২৯টি মণ্ডপে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। প্রতিমা ও মণ্ডপ ঘিরে সাজসজ্জা সম্পন্ন। সাজানো হয়েছে বাহারি রংয়ের আলোকসজ্জায়।
এদিকে, উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে থাকবে পুলিশ ও আনসার সদস্য। সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে র্যাব ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনী।
শুক্রবার ৭ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ৮ তারিখ নবপত্রিকা প্রবেশ, সপ্তমী ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা। ৯ তারিখ মহাষ্টমী, কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা। ১০ তারিখ মহানবমী পূজা এবং ১১ অক্টোবর দেবীর বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ঢাকার বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে শারদীয় দুর্গাৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের দুর্গোৎসবকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মন্দিরের সামনের মাঠজুড়ে প্যান্ডেল স্থাপন ও মন্দিরের সাজসজ্জার কাজ চলছে।
ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কয়েকস্তরের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।’
নিরাপত্তার জন্য ‘এ’ ক্যাটগরিতে ঢাকেশ্বরী, রামকৃষ্ণ, ধানমন্ডি ও বনানী এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রমনার কালিমন্দির ও সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। এর মধ্যে ৮৮টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৮৩টি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ এবং ৪৮টি মন্দিরকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ,
র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোক কাজ করবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি পূজামণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পূজামণ্ডপের ভেতরে ব্যাগ, ছুরি, কাঁচি বা দাহ্য পদার্থ নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুলিশ। পূজামণ্ডপগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে রমনা ও ঢাকেশ্বরীতে দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এ চেতনার বিকাশের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, গোটা বাঙালিরই সর্বজনীন উৎসব। এই উৎসব সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
সারাদেশে উৎসবের আঙ্গিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।