অগ্রসর রিপোর্ট: প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) সভায় শর্ত
সাপেক্ষে ফরিদপুর সিটি কর্পোরেশন (এফসিসি), সাতটি নতুন পুলিশ থানা এবং
একটি পৌরসভা গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সকালে তাঁর কার্যালয়ে এই সভা
অনুষ্ঠিত হয়। পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ
শফিউল আলম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, নিকার’র সভায় আজ (সোমবার) ১৫টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। যার
মধ্যে রয়েছে- শর্ত সাপেক্ষে ফরিদপুর সিটি কর্পোরেশন (এফসিসি) ঘোষণার
অনুমোদন, সাতটি নতুন পুলিশ থানা এবং একটি নতুন পৌরসভা গঠন।
কুমিল্লা এবং গাজিপুর বিভাগ না হয়েই এই দু’টিকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা
সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এগুলো অতীতে হয়েছে। তবে,
ভবিষ্যতে আর হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় সদর দপ্তর হবে সিটি কর্পোরেশন। যেহেতু ফরিদপুর এখনও
বিভাগীয় শহর হয়নি সেহেতু যখন এটি বিভাগীয় শহর হবে তখন সিটি কর্পোরেশন
হবে।’
যেসব পুলিশ থানা নিকার’র সভায় অনুমোদন পেয়েছে যেগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতুর
দুইপাড়ে দুইটি থানা, উত্তর এবং দক্ষিণ থানার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে (যেমনটি
বঙ্গবন্ধু সেতুতে রয়েছে)। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, ঠাকুরগাঁর সদরের ভুলিতে একটি নতুন
পুলিশ থানা, নোয়াখালীর ভাসানচরে, চট্টগ্রামের রাঙ্ধসঢ়;গুনিয়াকে বিভক্ত করে কর্ণফুলীর
দক্ষিণ প্রান্তে একটি থানা এবং কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে নতুন থানার প্রস্তাব করা
হয়েছে। আর সিলেট জেলার বিশ্বনাথে পৌরসভা গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, বৈঠকে গোপালগঞ্জ পৌরসভা, বাগেরহাট জেলার মোংলা বন্দর
পৌরসভা এবং গাজিপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার সীমানা স¤প্রসারণ এবং বরিশাল
জেলার মেহেন্দিগঞ্জ থানা এবং কাজির হাট থানার প্রশাসনিক এলাকা পুননির্ধারণের
অনুমোদন দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌরসভার সীমানা সংকোচন করা
হয়েছে।
আলম বলেন, এটির কিছু সীমানা বেজা’র মধ্যে পড়ে যায়। নিয়ম হচ্ছে পৌরসভাতে
বেজা হতে পারবে না। তাই এটাকে পৌরসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কিছু অংশ সিটি কর্পোরেশনের
মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এটি সিটি কর্পোরেশন থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুরে আনন্দ মিছিল
নিকারের সভায় অন্যতম প্রাচীন জেলা ফরিদপুর দেশের ত্রয়োদশতম সিটি করপোরেশনে
উন্নীত হওয়ার অনুমোদন পেয়েছে। সোমবার নিকারের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের খবর
ফরিদপুরে পৌঁছালে হাজারো জনতা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও স্থানীয়
সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসভবন শহরের বদরপুরের ‘আফসানা মঞ্জিলে’
এসে জড়ো হন।
উচ্ছসিত ফরিদপুরবাসী বিভিন্ন সেøাাগানের মাধ্যমে আনন্দ- প্রকাশ করে। ফরিদপুর
সিটি করপোরেশন অনুমোদন হওয়ায় ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে তারা ফুলেল
শুভেচ্ছা জানান ও মিষ্টি বিতরণ করে।
এসময় ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নিকারের মিটিংয়ে ফরিদপুর
সিটি করপোরেশনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফরিদপুর সিটি করপোরেশনের অনুমোদন
দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।’
তিনি বলেন, ‘মিটিংয়ে একই সাথে ফরিদপুরকে পদ্মা বিভাগ করারও সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়েছে। পদ্মা বিভাগের হেড কোয়ার্টার হবে ফরিদপুর। এ কারণে আমার নিজের পক্ষ থেকে
এবং ফরিদপুরবাসীর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফরিদপুরকে আমি উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মধ্যে অন্যতম জেলায়
পরিণত করেছি। ফরিদপুর আরেকধাপ এগিয়ে গেল। স্বাধীনতার পর ফরিদপুর তার যোগ্য
মর্যাদায় আসীন হলো।’
এদিকে ফরিদপুর সিটি করপোরেশন অনুমোদন হওয়ায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আওয়ামী
লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে বিশাল আনন্দ র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি জেলা আওয়ামী
লীগ কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের
সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে উৎফুল জনতার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহŸায়ক এএইচএম ফোয়াদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঐকান্তি প্রচেষ্টায় মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরবাসীর আরেকটি প্রাণের দাবি পূরণ করেছেন। এজন্য এ শহরবাসী
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। নাগরিকরা এ জন্য আজীবন প্রধানমন্ত্রীকে তাদের হৃদয়ে ধরে
রাখবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বদলে দেয়া ফরিদপুরের কারিগর ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ
হোসেনের অবদান ফরিদপুরবাসী চিরদিন মনে রাখবে।’
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল বলেন, ‘ফরিদপুর শহর এখন
উন্নয়নের নতুন যুগে প্রবেশ করল। ভবিষ্যতে এ শহর হবে দেশের অন্যতম একটি আধুনিক ও
নাগরিক সুবিধাসংবলিত শহর। ফরিদপুরকে তার যোগ্য মর্যাদায় আসন করার জন্য তিনি
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপির প্রতি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাকে অভিনন্দন জানান।’
সাধারণ নাগরিকদের মাঝেও আনন্দ ও উচ্ছ¡াস চোখে পড়ে। ব্যবসায়ী নেতা নজরুল ইসলাম
বলেন, ‘এ অনুমোদনের জন্য ফরিদপুরবাসী অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে সেই স্বপ্নের দিন আজ
এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার
মোশাররফ হোসেনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
ফরিদপুর চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ফরিদপুরের
উন্নয়নের রূপকার ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রচেষ্টায় আজ ফরিদপুর
সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পেল। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ
জানাই।’
তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরবাসীর জন্য আজ বড় খুশির দিন, আনন্দের দিন।’
ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ
হোসেনের কাছে আমরা ফরিদপুরবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ফরিদপুরবাসী আরো
একধাপ এগিয়ে গেল।’