নড়াইল জেলা প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ায় স্বামীর নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সকালের খবর পত্রিকার লোহাগড়া প্রতিনিধি এসএম আলমগীর কবিরের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। লোহাগড়ার উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের নাসরিন সুলতানা দিপা বাদী হয়ে গত ২ মে ২০১৭ মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল-২০১৭ তারিখ সকালে লোহাগড়া পৌরসভার গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত বিল্লাল সরদারের ছেলে খালিদুর রহমান ছোটন তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানা দিপাকে নিয়ে পাশ^বর্তী পৌরসভার মদিনা পাড়ায় বোন ইতি বেগমের বাসায় বেড়াতে যায়। বিকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বোনের বাসায় খালিদ তার স্ত্রীর ওপর চড়াও হয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বেধড়র মারপিট ও আয়রন দিয়ে স্যাকা দেয়।
দিপার আর্ত চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে এসে ঘরের দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় দিপা ঘরের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়লে খালিদ তার স্ত্রী দিপাকে আয়রণের তার গলায় জড়িয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে মেরে ফেলার চেষ্ঠা চালায়।
এ বিষয় সাংবাদিক এসএম আলমগীর কবির একটি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন স্বামী খালিদুর রহমান ছোটন ও স্ত্রী নাসরিন সুলতানা দিপা। তারা স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাংবাদিকের প্ররোরচনায় সাংবাদিক এস এম আলমগীরকে হয়রাণী করার জন্য ঘটনার দুদিন পর নাসরিন সুলতানা দিপা বাদী হয়ে ২ মে ২০১৭ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে মদিনাপাড়ার বাড়ির মালিক আজি শেখ বলেন, ৩০ এপ্রিল ২০১৭ রবিবার আমার শ্যালক খালিদ ও তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানা দিপাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে ব্যড়াতে আসে। বিকালে হঠাৎ করে আমার শ্যালক খালিদ তার স্ত্রী নাসরিনকে বেধরক মারপিট করে। পরে পুলিশ তাদেরকে লোহাগড়া থানায় নিয়ে যায়।
রাতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনের সহয়তায় থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হয়। কয়েকজন সাংবাদিক সত্য ঘটনা আড়াল করে নাসরিন সুলতানা দিপাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে আলমগীরকে হয়রাণী করাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
লোহাগড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ভুইয়া জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মদিনাপাড়া বাসিন্দা ও বাড়ির মালিক আজি শেখ আমাকে ফোনে জানান তার শ্যালক খালিদ তার স্ত্রীকে মারপিট করছে। ফোন পাওয়ার পর আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি পুলিশও সংবাদ পেয়ে উপস্থিত হয়েছে। পুলিশ ওই সময় নাসরিন সুলতানা দিপাকে মারপিটের অভিযোগে তার স্বামী খালিদ সিকদারও নাসরিন সুলতানাকে থানায় নিয়ে যায়। স্ত্রী নাসরিন সুলতানা দিপা ওই ঘটনায় তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা না করতে চাইলে তাদেরকে রাত আটটার দিক ছেড়ে দেওয়া হয়। নাসরিন সুলতানা দিপার ঘটনা সাংবাদিক আলমগীর ঘটায়নি। তাকে মিথ্যা হয়রানি করা হচ্ছে।
লোহাগড়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রত্যক্ষদর্শী শেখ মোঃ আকিদুল ইসলাম হুরাই জানান, ‘খালিদ যখন তার স্ত্রী দিপাকে ঘরে আটকে মারপিট করে, তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আহত দিপাকে ক্লিনিকে নেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। সাবেক কাউন্সিলর হুরাই আরো দাবি করেন, নিজেদের অপরাধ ঢাকতে স্বামী-স্ত্রী মিলে সাংবাদিক আলমগীরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করছে’।
মামলার বাদী নাসরিন সুলতানা দিপার মুঠোফোন ০১৯৪৭-২৮২৯৩০ নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তার স্বামী খালিদ সিকদার ফোন রিসিভ করেন। দিপার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন এখন কথা বলা যাবে না। তারা স্ত্রীর সাথে সাংবাদিকের কি হয়েছিল সে ব্যাপারেজানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে হয়ে ওঠেন এবং তিনি কোন কথা বলতে চাননি।
সুলতানাকে সাংবাদিক এসএম আলমগীর কবির লাঞ্চিত করেছে বা তার কাছে অর্থ চেয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয় যে বাড়িতে ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন বাদী খোদ সে বাড়ির নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপিত এনামুল কবির টুকু বলেছেন, সাংবাদিক এসএম আলমগীর কবিরের মামলার বিষয়টি আমি ও আমার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মীর্জা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর চেয়ারম্যানের লিখিত আদেশ বলে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। বাদি নাসরিন মালিকই বলেছেন যে আলমগীরকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে এসএম আলমগীরের ভাল সর্ম্পক নেই। তারাই বাদিকে ফুঁসলিয়ে মামলা করিয়েছে।
লোহাগড়া থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, মামলা ইস্যুর দিন আমি ছিলাম না। আমি সঠিক কিছু বলতে পারব না। আপনি তদন্ত কর্মকতার সাথে কথা বলেন।