অগ্রসর রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়াও কমিশনের অন্যান্য স্টেকহোল্ডার সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। এ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নির্বাচনের সময়সূচি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরেক দফা বৈঠকেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এ লক্ষ্যে একটি খসড়া রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী ১৪ মে কমিশন সভায় এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
সচিব বলেন, কমিশনের লক্ষ্য সবাইকে আস্থায় নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। কোন কোন আইনে সংস্কার আনলে সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব, এ ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সুশীল সমাজ এবং সাংবাদিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থারও মতামত নেয়া হবে। তাদের মতামত নিয়ে নির্বাচনী আইনের যুগোপযোগী সংস্কার করতে চায় কমিশন। এর আগে কমিশন থেকে প্রণীত একটি কমিটি সম্ভাব্য আইনের খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করবে।
আগামী বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে বর্তমান কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের আগে সংসদ নির্বাচনের অন্যতম পাঁচটি অনুষঙ্গকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৮ সালের আগস্টের মধ্যে সেসব কাজ শেষ করার কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ধরে খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগে সব ধরনের কাজ শেষ করার রূপরেখা থাকছে রোডম্যাপে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী আগস্টের মধ্যে কমিশন প্রস্তাবিত আইন-বিধি সংশোধনের খসড়া প্রণয়ন করবে এবং তা নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সাথে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করে সেপ্টেম্বরে আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হবে। নভেম্বরে আইন-বিধি সংশোধন সম্পন্ন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং ডিসেম্বরে তা চূড়ান্ত করা হবে।
এ ছাড়া আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে থেকে আগস্টের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো, আগামী জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনী মালামাল মুদ্রণ ও মাঠপর্যায়ে পাঠানো, ভোটগ্রহণের কমপক্ষে ৩০ দিন আগে সব ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী করা, আগামী বছরের জুন থেকে কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণার ২৫ দিন পূর্বে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে সময়সূচি ঘোষণার ২০ দিন পূর্বে নির্বাচনী ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকার মুদ্রন সম্পন্ন করা, সময়সূচি ঘোষণার ১৫দিন আগে শাহবাগ, গুলিস্তান ও মতিঝিলে ফলাফল ডিজিটাল মনিটরের মাধ্যমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্বাচন ভবনের বর্হিঃদেয়ালে ফলাফল প্রদর্শনের জন্য স্ক্রল স্থাপন করাসহ বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ, আন্তঃমন্ত্রণালয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা, ইভিএম ব্যবহার উপযোগী করা, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ২৫ দিন পূর্বে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বেসরকারি সংস্থা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সভার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে কমিশনের রোডম্যাপে।
এছাড়াও রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও বৈঠক, প্রশিক্ষণ-ব্রিফিং, নির্বাচনী প্রচারণামূলক কার্যক্রম, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন কমিশনের ও বেসরকারি পর্যায়ের দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচার সংক্রান্ত কার্যাবলী, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন সংগ্রহ, নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন এবং আইসিটি সহায়তা সংক্রান্ত সভা করার বিষয়ও রয়েছে রোডম্যাপে।