রোজাদারদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। অনেক গুরুত্ব, তাৎপর্য ও পুরস্কারমণ্ডিত এই রোজা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)–র বর্ণনা থেকে জানা যায় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান হাজির হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের জন্য এই মাসে রোজা পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শিকল বদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।’ (নাসায়ি: ২,১০৬)
তাকওয়া অর্জন
রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। আল্লাহকে ভয় করার জন্য মাসটি দিয়েছেন তিনি। কোরআনে ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময়ে এ-সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। আর যে ব্যক্তির পক্ষে রোজা রাখা দুঃসাধ্য, তার একজন অভাবগ্রস্তকে অন্ন দান করা কর্তব্য। তবু যদি কেউ নিজের খুশিতে পুণ্যের কাজ করে, তবে তার পক্ষে বড়ই কল্যাণকর। আর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারতে তবে বুঝতে, রোজা পালনই তোমাদের জন্য আরও বেশি কল্যাণকর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
আল্লাহ নিজেই রোজার পুরস্কার দেবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)–র কাছ থেকে হাদিসটিতে জানা যায়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই—রোজা ছাড়া। এটা আমার জন্য, আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। আর রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৯২৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, রোজা শুধু আমার জন্যই, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫১)
রোজার কারণে আগের সব গুনাহ মুছে ফেলা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও নেকির আশায় রমজান মাসের রোজা রাখে (এবং রাতে) দণ্ডায়মান হয় (সালাত পড়ে), তার আগের গুনাহসমূহ মাফ করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৮)
হাদিসে আছে ‘রোজা কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন সুপারিশ করবে। কোরআন বলবে, হে আমার রব, আমি তাকে রাতে ঘুমোতে দিইনি। আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ রোজা ও কোরআন উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।
রোজাদারের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। মজলুমের দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’
রোজার সমকক্ষ কোনো আমল নেই। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সবচেয়ে উত্তম আমল কী?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো! কারণ, রোজার সমকক্ষ কিছুই নেই।’
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি রোজা পালন করছি। (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যুবকদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার সক্ষমতা নেই, তারা যেন রোজা পালন করে। কারণ, রোজা জৈবিক তাড়না দমন করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,০৬৫)
রোজার কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও রোজা পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।’ (বুখারি: ২,৮৪০)
রোজাদার বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। হজরত সাহল বিন সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। তাঁদের ছাড়া অন্য কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদারেরা কোথায়? তখন তাঁরা দাঁড়িয়ে যাবেন এবং ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। যখন তাঁদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে তাঁরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৭৯৭)