নিজস্ব সংবাদদাতা- প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ২০১১ সালে গ্রিন প্লানেট রিসোর্টকে সাড়ে ৮ কোটি টাকার ওভার ড্রাফট (ওডি) ঋণ সুবিধা দেয় রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা। এ অর্থ আবার স্থানান্তর করা হয় বদর স্পিনিং মিলের হিসাবে, যা নিয়মবহির্ভূত। স্থানীয় শাখা থেকেই পরে গ্রিন প্লানেট রিসোর্টকে ১০৯ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এ ঋণ থেকেই ওডির ঋণের অর্থ সমন্বয় করা হয়। সহযোগী আরো দুই প্রতিষ্ঠানসহ গ্রিন রিসোর্টের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮০ কোটি টাকা; যা আদায় করতে পারছে না ব্যাংকটি।
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে একক ঋণগ্রহীতা সীমাও লঙ্ঘন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একক ঋণগ্রহীতা সীমা হিসেবে একটি গ্রুপকে সর্বোচ্চ প্রত্যক্ষ ১৫ শতাংশ ঋণ দেয়া যায়। ৩১ মার্চ রূপালী ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা। এ হিসাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রূপালী ব্যাংকের প্রত্যক্ষ একক ঋণগ্রহীতা সীমা ১৬৫ কোটি টাকা। অথচ দেয়া হয়েছে ৪৭৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রক্ষিত মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি প্রত্যক্ষ ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, ব্যাংকগুলো তা মেনে চলবে।
গ্রিন প্লানেট রিসোর্টের নামে ১০৯ কোটি টাকা মেয়াদি ঋণ অনুমোদন হলেও পরে তা ১৩৪ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। পুরো অর্থই ব্যয় হয়েছে স্থানীয় ঋণপত্রে। রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিলাসবহুল রিসোর্ট হলেও বেশির ভাগ মালপত্র কেনা হয়েছে স্থানীয় ঋণপত্রের মাধ্যমে। সূত্রমতে, ১৩৪ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ওডি হিসেবে সমন্বয় হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি স্থানীয় ঋণপত্রের বিপরীতে ২৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখার গ্রাহক মীম এন্টারপ্রাইজকে ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কাঠের ঘর সরবরাহের উদ্দেশ্যে। বাকি অর্থ পূবালী, বেসিক, ঢাকা, ইউসিবিএল, ইসলামী ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়।
দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুনে ঋণ পরিশোধ শুরু করার কথা। যদিও গতকাল পর্যন্ত তা শুরু করেনি গ্রিন প্লানেট রিসোর্ট। শুধু গ্রিন প্লানেটের কাছেই রূপালী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া সহযোগী বদর স্পিনিংয়ের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৩২৮ কোটি, ব্লু প্লানেট নিটওয়্যার্সের কাছে ২৮ কোটি ও ব্লু প্লানেট সোয়েটারের কাছে ২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বদর স্পিনিংয়ের ঋণ খেলাপি হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে পুনঃতফসিল করা হয়েছে। গ্রিন প্লানেট রিসোর্ট ও ব্লু প্লানেট সোয়েটারের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দফায় দফায় চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশনা সত্ত্বেও উল্টো প্রায় ২০০ কোটি টাকা অর্থায়ন বাড়িয়েছে ব্যাংকটি।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, সব ধরনের ঋণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তবে প্রতি মাসে রক্ষিত মূলধনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এ কারণে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। ঋণ অনুমোদনের সময় দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধ শুরু করবে। প্রকল্পের অর্থ স্থানান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে টাকা লেগেছে, তাই স্থানান্তর করা হয়েছে। আমাদের কাছে এমনই জবাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে আমরা সতর্ক করে দিয়েছি। তার দাবি, রূপালী ব্যাংকের ভালো প্রকল্পের মধ্যে এটি একটি। ভবিষ্যতে ব্যাংকের জন্য গর্বের প্রকল্প হবে এটি।
রূপালী ব্যাংক থেকে যখন ঋণ নেয়া হয়, তখন তা একক ঋণগ্রহীতা সীমা লঙ্ঘন করেনি বলে দাবি করেন গ্রিন প্লানেট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, পরবর্তীতে রূপালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে ঋণসীমা অতিক্রম করে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রিন প্লানেট রিসোর্টটি অতিমূল্যায়িত প্রকল্প। কেবল ব্যাংকঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় হবে বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করলেই প্রকল্পটি লাভজনক হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতা ও অতিব্যয়ের কারণে এটা সম্ভব নয়। এ কারণে পুরোপুরি চালু হলে অতিথি সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিনিয়োগকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদের।
এ প্রসঙ্গে আরিফুর রহমান বলেন, অনেক হিসাব-নিকাশ করে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। সোয়া ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে প্রকল্পটিতে। এখন প্রকল্পের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮০০-৯০০ কোটি টাকা। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এ রিসোর্ট থেকে আয় করে ব্যাংকের টাকা নিয়মিত পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না।