অগ্রসর রিপোর্ট : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আদালত। অপর চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা দেড়টায় এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হচ্ছে রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম রাব্বি আকন, মুহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও হাসান। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হন। যে চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে তারা হলেন মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বাদী ও আসামিপক্ষের স্বজনসহ উৎসুক জনতা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়ে বরগুনা আদালতের বাইরে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে। রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডপ্রাপ্তরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বেলা একটায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রায় পড়া শুরু হয়। বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় কারাগারে থাকা ৮ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে আদালতে আনা হয়। একই মামলার অন্যতম আসামি জামিনে থাকা রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের সঙ্গে সকাল পৌনে ৯টায় আদালতে আসেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন সকালে উপকূলীয় এলাকা বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল, পরে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেড়জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বরগুনা জেলা পুলিশ সক্রিয় হয়ে দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে। রিফাত হত্যার ২০ দিনের মাথায় গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড দাবি করলে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন মিন্নি।
প্রায় দেড় বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ডে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার ওসি (তদন্ত) হুমাউন কবির গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের বিচার চলে জজ আদালতে। বাকি ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বরগুনার শিশু আদালতে আলাদাভাবে তাদের বিচার চলছে। গত ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এ মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হচ্ছেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বী, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হচ্ছেন রিসান, রিফাত হাওলাদার, রায়হান, অলিউল্লাহ নাঈম, তানভীর, চন্দন, রাতুল, নাজমুল হাসান, নিয়ামত, মারুফ বিল্লাহ, মারুফ মল্লিক, আরিয়ানম শ্রাবণ এবং প্রিন্স মোল্লা। তাদের বিরুদ্ধে কিশোর অপরাধ আইনে হত্যা মামলা চলছে।