অগ্রসর রিপোর্ট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ দেখছে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সেই যুদ্ধের তিন সপ্তাহে প্রাণহানি হয়েছে অগণিত। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ‘ইউরোপের রুটি’ বলে পরিচিত সুন্দর দেশ ইউক্রেন। সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য যোগদানকে কেন্দ্র করেই গড়িয়েছে এই যুদ্ধ। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এখন আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
রাশিয়া খবর দিচ্ছে, ইউক্রেন তাদের সঙ্গে আংশিক ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ফলে আশা জেগেছে, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এই সামরিক অভিযান অবসানের। কারণ সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির কিছু বিষয়ে ইউক্রেন সম্মত হয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন , নিরপেক্ষ অবস্থা বজায় রেখে এখন গুরুত্বের সঙ্গে নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ আলোচনা করা হচ্ছে। আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের জনগণের নিরাপত্তা, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইউক্রেনে রুশভাষী জনগণের অধিকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ল্যাভরভ আরও বলেছেন, আলোচনা বেশ কিছু কারণে কঠিন। তবে আপসের বিষয়েও আমাদের আশা রয়েছে। মানবিক ইস্যুতে, শত্রুতার পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
রুশ গণমাধ্যম আরটির খবরে বলা হয়, শান্তি চুক্তির ব্যাপারে রাশিয়া ইউক্রনকে শর্ত দিয়ে দিয়েছে যেগুলো তাদের মানতে হবে। সম্ভাব্য সে শর্তগুলোর খসড়া প্রকাশ করেছে রাশিয়া। যেখানে পুতিন ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় যারা কখনো ন্যাটোতে যোগ দিবে না।
সম্ভাব্য যে শান্তিচুক্তির কথা বলা হচ্ছে তা নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও বিবৃতি এসেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ইউক্রেন বলেছে, যুদ্ধের ইতি টানতে তারা আলোচনায় ইচ্ছুক। তবে কোনো ধরনের আত্মসমর্পণ বা রাশিয়ার দেওয়া শর্ত তারা মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তারা।
এদিকে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে জেলেনস্কি একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘চলমান সভা থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, আলোচনায় দুপক্ষের অবস্থান ইতোমধ্যেই আরও বাস্তবসম্মত হয়ছে। তবে ইউক্রেনের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখনও সময় প্রয়োজন।’
জেলেনস্কি সমঝোতার জন্য একটি সম্ভাব্য উপায়ের ইঙ্গিত দিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইউক্রেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা গ্যারান্টিগুলি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হবে। কিন্তু তা ন্যাটো জোটে পুনরায় পুরোপুরিভাবে যোগদানের জন্য তার দীর্ঘস্থায়ী আশাকে বন্ধ করে দিয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বরাতে রয়টার্সে জানিয়েছে, অস্ট্রিয়া বা সুইডেনের লাইনে নিজস্ব সেনাবাহিনী নিয়ে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টিকে সম্ভাব্য আপস হিসাবে দেখা হচ্ছে। ন্যাটোর বাইরে থাকা ছয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশের মধ্যে তারা সবচেয়ে বড়।
ইউক্রেনের আলোচনাকারী দলের প্রধান এবং জেলেনস্কির সহযোগী মিখাইলো পডলোলিয়াক বুধবারের আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার আগে টুইট বার্তায় জানান, ইউক্রেনের সামরিক পাল্টা আক্রমণগুলি পক্ষপাতের স্বভাবকে আমূল পরিবর্তন করেছে।
শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া রাশিয়ার শীর্ষ আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, কিয়েভ একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার ধারণা নিয়ে দোলাচলের মধ্যে রয়েছে। তবে সব ইস্যুর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে কোনো অগ্রগতি আসেনি।
বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্ট্রিয়া ও সুইডেনের মতো নিরপেক্ষ আদলের একটি দেশ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। তবে তারা তাদের নিজস্ব সেনা ও নৌ বাহিনী রাখার দাবি জানিয়েছে। এই সামরিক বাহিনীর সংখ্যার বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত করার প্রস্তাবও দিয়েছে ইউক্রেন।’
ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, মস্কো চায় কিয়েভ যেনো ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার একটি অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেইসঙ্গে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে গণপ্রজাতন্ত্রী (স্বাধীন) ডিপিআর ও এলপিআর হিসেবে ঘোষণা করে।
১৯৫৫ সালে অস্ট্রিয়া নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এর মানে দেশটি কোনো সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে না এবং দেশটির মাটিতে কোনো সেনা ঘাঁটিও স্থাপন করা যাবে না।