গত ডিসেম্বরে একটি রাজকীয় সামরিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ভ্লাদিমির পুতিন রুশ জনসাধারণের উদ্দেশে বলেছিলেন, তিনি পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। আর এখন রাশিয়াজুড়ে তিন দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ চলছে এবং এই নির্বাচনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই তিনিই আবার নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খবর বিবিসির।
আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাশিয়ার সবচেয়ে পূর্বের অঞ্চল কামচাটকা উপদ্বীপে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় এবং ভোটগ্রহণ শেষ হবে দেশটির সবচেয়ে পশ্চিমের এলাকা কালিনিগ্রাদে রোববার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়।
ক্রেমলিনের জৌলুসপূর্ণ একটি সম্মেলন কেন্দ্রে গত ডিসেম্বরের জাঁকজমকপূর্ণ ওই অনুষ্ঠানে সৈন্যদের মধ্য থেকে যারা ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ অংশ নিয়েছিল, তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একটি ছোট দলের সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে দখল করা ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের একজন কমান্ডার পুতিনের সামনে আসেন। এ সময় লেফটেনেন্ট কর্নেল পদের ওই কর্মকর্তা বলে ওঠেন, ‘আমাদের আপনাকে দরকার, আপনাকে রাশিয়ার দরকার।’ তিনি এ সময় পুতিনকে সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানান। সেখানে থাকা প্রত্যেকেই এ সময় তার কথায় সমর্থন জানান।
ভ্লাদিমির পুতিন মাথা ঝুঁকিয়ে বলেন, ‘এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমি রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’ পরে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই ঘটনাটিকে ‘সম্পূর্ণ স্বতস্ফূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভ্লাদিমির পুতিন সোভিয়েত একনায়ক জোসেফ স্তালিনের সময় থেকে শুরু করে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শাসক হিসেবে ইতোমধ্যেই তার নাম ইতিহাসে তুলে ফেলেছেন। তিনি ২০০০ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। এরমধ্যে চার বছর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে সংবিধান পরিবর্তনের কারণেই তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে দাঁড়াতে তাকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যেই আইন পরিবর্তন করা হয়েছিল। আইন অনুসারে, তিনি ২০৩০ সালেও ৭৮ বছর বয়সে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন করে ছয় বছরের মেয়াদের জন্য লড়তে পারবেন।
তার মেয়াদকালে ক্ষমতাকে পদ্ধতিগতভাবে শক্ত করে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন পুতিন। তার মেয়াদে তার সামনে কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিই তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দেখা যায়নি। তার সমালোচকরা হয় মারা গেছেন, নয়তো জেলখানায় অথবা নির্বাসনে। তবে তার পরেও ক্রেমলিন রাশিয়ার নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে বদ্ধপরিকর। যদিও নির্বাচনে ফলাফল কী হতে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কর্তৃপক্ষ এখন ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতির ওপর জোর দিচ্ছেন, যা পুতিনের জনপ্রিয়তার একটি প্রমাণ হিসেবে দেখানো হবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৮ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যালট বাক্স ভরাট করার অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তবে এবারের ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া আগের চেয়ে আরও সহজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিনের চার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন কমিউনিস্ট পার্টির নিকোলাই খারিতোনোভ, জাতীয়তাবাদী এলডিপিআরের প্রার্থী লিওনিদ স্লাটস্কি, নিউ পিপল পার্টির ভ্লাদিশ্লাভ দাভানকোভ এবং মস্কোর কাউন্সিলর বোরিস নাদেঝদিন।