অগ্রসর রিপোর্ট : যাত্রীদের পকেট কাটার কথিত সিটিং সার্ভিস চালু রাখতে এমন কোনো কৌশল নেই যেটার প্রয়োগ করছে না বাস মালিকরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, বাসে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী তোলা আর স্টপেজে স্টপেজে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পাশাপাশি বাস কমিয়ে দেয়ার পর আজ সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সঙ্গে আবার সিটিং চালুর বিষয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে পরিবহন মালিকরা।
বিকাল চারটায় বিআরটিএর প্রধান কার্যালয় এলেনবাড়িতে এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ।
এদিকে বাস মালিকদের চাপে কোনোভাবেই নতি স্বীকার না করার দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এমন সিদ্ধান্ত হলে তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন সংগঠনটির একজন শীর্ষ নেতা।
রাজধানীর গণপরিবহনে সিটিং বলে কোনো বৈধ বাস সেবা নেই। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায়ের কৌশলের নামে সিটিং, ডাইরেক্ট, স্পেশাল বা অন্য নামে বাস চালু করা হয়। বাসগুলোতে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হতো। পথে পথে যাত্রী তোলা হলেও ভাড়া দিতে বাধ্য করা হতো এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত। আবার সিটিং নামে চললেন দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা হতো না-এমনও নয়।
এই অবস্থায় জন অসন্তোষের মধ্যে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও তার আপত্তির কথা স্পষ্টতই জানান। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে ১৫ এপ্রিল থেকে সিটিং তুলে দেয়ার কথা জানান।
পরে ১৬ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। কিন্তু এরপর অরাজকতা আরও বাড়ে। সিটিং নামে চলা বাসগুলো লোকাল হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হতে থাকে আগের নিয়মেই। পাশাপাশি সড়কে বাস কমিয়ে দেয়া হতে থাকে। আর যাত্রীরা যেন একজোট হতে না পারে সে জন্য বিভিন্ন এলাকায় বাস মালিখরা ‘মাস্তান’ বসায় বলে অভিযোগ করে যাত্রীদের স্বার্থে কাজ করা যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সরকারি নিয়ম না মানলে আর বাস বন্ধ রাখলে রুট পারমিট বাতিল করা হবে-বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিউর রহমান এমন ঘোষণা দিলেও তার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। আর এই অবস্থায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পষ্টতই তার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, বাস মালিকরা খুব প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন।
মন্ত্রীর এই সুরে কথা বলার পরদিন বুধবার রাজধানীতে বাস সংখ্যা আরও কমে গেছে। এতটাই কমেছে যে সড়কে চিরচেনা যানজটও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় আবারও অবৈধ সিটিং সার্ভিস চালুর বিষয়ে বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাস মালিকরা। জানতে চাইলে বাস মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েতউল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস আবার চালু করে পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কী করা যায়-এ বিষয়েই এই বৈঠক হবে।’
কোন প্রক্রিয়ায় সিটিং চালু করতে চান-জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘ওখানে বসে আলোচনা হয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
নির্ধারিত ভাড়ায় বাস না চালিয়ে আইন ভঙ্গ করা আর ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে নতুন সিদ্ধান্ত নিলে তা কেন বাস্তবায়ন হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, ‘দুই একদিন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলেও তৃতীয় দিনে সেটি কমে এসেছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, এই নৈরাজ্যকে পুঁজি করে কেউ আবার অবৈধ সিটিং সার্ভিস চালু করতে চায়, তাহলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আইনের মাধ্যমে তা মোকাবেলা করা হবে।