অগ্রসর রিপোর্ট : রাজধানীর বনানীতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় যখন দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে, ঠিক তখন রাজধানীতেই ঘটে যাওয়া একই ধরনের একটি ঘটনা থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে ওঠা এই অভিযোগের তদন্তে পুলিশের তেমন কোনো আগ্রহ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৫ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি আট আসামির সাতজন।
গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর জুরাইন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে সারা রাত আটকে রেখে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে আট জনের বিরুদ্ধে। কদমতলী থানায় করা মামলায় ভুক্তভোগী কিশোরী অভিযোগ করেন, শাওন, মুন্না, জলিল, মিশাল, মাসুদ, সজীব ও তানজিল ওরফে তাঞ্জু এবং স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী স্বপন তাকে ধরে নিয়ে ওই স্কুলে আটকে রাখে। পরে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
বনানীতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার পর, পুলিশ যতটা তৎপর এই মামলা নিয়ে। ঠিক তার উল্টোটা জুরাইনের গণধর্ষনের মামলাটি নেই তেমন কোন আগ্রহ। বনানী ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে ও আসামি ধরতে চারটি দল গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বনানী থানার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার কোনো অভিযোগ ছিল কি না, সেটি তদন্তেও করা হয়েছে আরেকটি কমিটি।
এই মামলায় দফায় দফায় ব্রিফ করছেন অথবা বিবৃতি দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা, তাঁরা বলছেন পুলিশ সব ঘটনারই তদন্ত করে নির্লোভভাবে।
তাহলে জুরাইন ধর্ষণের ঘটনা তদন্ত আর আসামি গ্রেপ্তারে অবহেলা কেন? জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মহসিন হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি এই বিষয়টা আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
জুরাইনের ঘটনায় ২৮ এপ্রিল মামলার পর এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন কেবল এক আসামি। গত ৬ মে ওই স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী স্বপনকে আটক করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাজু মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, স্বপন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদেরকে বলেছেন, শাওন তাকে এক হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে স্কুলের একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। পরে ওই কিশোরীকে নিয়ে আসলে তাকে আট জন মিলে ধর্ষণ করা হয়। স্বপন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও অন্য আসামিদেরকে কেন গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না- জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কদমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজু মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আপাতত আর কোন খবর নেই।’
ধর্ষিতা কিশোরীর মা-বাবা পুরান ঢাকায় থাকেন। তাদের মেয়ে পরিবারের অগোচরে কয়েক দিন আগে এক তরুণকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ওই এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকে। হঠাৎ তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই তরুণী তার স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। এ সময় পূর্বপরিচিত শাওন তার অসহায়ত্বের সুযোগে জুরাইন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়।
রাতভর দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় তরুণীটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ভোর ছয়টার সময়ে তারা তরুণীকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেয়। চালক কিশোরীকে নানা পথ ঘুরিয়ে জুরাইনের ঋষিপাড়ায় নামিয়ে দেয়া হয়। অসুস্থ অবস্থায় তিনি প্রথমে মামার বাড়িতে যান। পরে স্থানীয় ক্লাব ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে বিচার চান।
সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি আপোসের চেষ্টা করেন। পরে ধর্ষিতা কদমতলী থানায় গিয়ে আটজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।