অগ্রসর ডেস্ক : রমজান হলো তাকওয়া অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণের মাস। তাকওয়া অর্জনই রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন: ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।’
(সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াত)। আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর গুণাবলি অর্জন করে সেই গুণে গুণান্বিত হোক। আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন: ‘আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা চমৎকার কোনো রং হতে পারে?’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৮)। হাদিস শরিফে আছে: ‘তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও।’(মুসলিম)।
যেহেতু মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি, তাই তাকে খেলাফতের দায়িত্ব পালনের যোগ্য হতে হলে অবশ্যই সেসব গুণাবলি অর্জন করতে হবে।
আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম রয়েছে, যারা এগুলো আত্মস্থ করবে; তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)। মহান আল্লাহর নামাবলি আত্মস্থ বা ধারণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণা ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজকর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের আধার বা অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা। রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। লক্ষ্য হলো রমজানের বাইরের বাকি এগারো মাস রমজানের মতো পালন করার সামর্থ্য অর্জন করা, দেহকে হারাম খাদ্য গ্রহণ ও হারাম কর্ম থেকে বিরত রাখা এবং মনকে অপবিত্র চিন্তাভাবনা, হারাম কল্পনা ও পরিকল্পনা থেকে পবিত্র রাখা।রমজান আরবি শব্দ রামদুন থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা, নিঃশেষ করে ফেলা । যা মানুষের সমস্ত পাপ, রিপুগুলোকে, জালিয়ে দেয়। এই রমজান মাস মানুষ কে লক্ষে এবং আত্মিক,নৈতিক,ও চারিএিক কল্যাণের ধারক বাহক বানানো নিমিত্তে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলা আমীন রমজানে রোজাকে উম্মতের উপর ফরজ করে দিয়েছেন।আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন সুরা বাকারা ১৮৩ আয়াতে বলেন : হে ইমান্দারগন! তোমাদের জন্য সিয়াম বিধান দেওয়া হল যেমন বিধান পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েছিল।যাতে তোমার তাওক্য়া অর্জন করতে সক্ষম হও। আল্লাহ রাবুল আল-আমীন আরও বলেন এরশাদ সুরা বাকারা ১৮৫ আয়াতে: রমজান মাস এতে মানুষের হেদায়েত এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন সত্য ও অসত্যর পার্থক্য কারীরুপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে।
রমজান পুণ্য অর্জনের যে অবারিত ধারিত ধারা প্রবাহিত তা অনন্যা মাস থেকে অধিক। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (মুসলিম)। নবী করিম (সা.) এভাবে রমজানকে স্বাগত জানাতেন: ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (বুখারি)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন-‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো (ঈদ করো)।’ (বুখারি ও মুসলিম)। তাই চাঁদ দেখা সুন্নত; এটি ইবাদতের প্রতি অনুরাগ ও ভালোবাসার প্রতীক। নতুন চাঁদকে হিলাল বলে। প্রথম তিন দিনে হিলাল বা নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পড়া সুন্নত: ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমান, ওয়াছ ছালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ; হিলালু রুশদিন ওয়া খায়র।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এই মাসকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, প্রশান্তি ও ইসলাম সহযোগে আনয়ন করুন; আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। এই মাস সুপথ ও কল্যাণের।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৫১, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহীন: ১২৩৬)। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ অতি অবশ্যই মসজিদে জামাতে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। তারাবির নামাজ জামাতে পড়ার জন্য যথাসময়ে মসজিদে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। খতমে তারাবি পড়া সবচেয়ে উত্তম। ইবাদতের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে কাজকর্মের রুটিন পরিবর্তন করে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। রমজানের পাঁচটি সুন্নত পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। যথা: (১) সেহরি খাওয়া, (২) ইফতার করা, (৩) তারাবির নামাজ পড়া, (৪) কোরআন তিলাওয়াত করা, (৫) ইতিকাফ করা। যাঁরা কোরআন তিলাওয়াত জানেন না,
তাঁরা শেখার চেষ্টা করবেন। যাঁরা তিলাওয়াত জানেন, তাঁরা শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করার চেষ্টা করবেন।
যাঁরা বিশুদ্ধ তিলাওয়াত জানেন, তাঁরা অর্থ বোঝার চেষ্টা করবেন। যাঁরা তরজমা জানেন, তাঁরা তাফসির অধ্যয়ন করবেন। সাহাবায়ে কেরাম সাধারণত প্রতি সপ্তাহে । এক খতম (পূর্ণ কোরআন করিম তিলাওয়াত সম্পন্নকরণ) করতেন-এভাবে প্রতি মাসে অন্তত চার খতম হয়ে যেত। আবার সেই সব সাহাবাই দীর্ঘ এক যুগ ধরে মাত্র একটি সুরা গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন। রমজানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত হলো ইতিকাফ।
রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাহ কিফায়া। এর কম সময় ইতিকাফ করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। পুরুষেরা মসজিদে ইতিকাফ করবেন। নারীরাও নিজ নিজ ঘরে নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করতে পারবেন। রমজানের বিশেষ তিনটি আমল হলো : (১) কম খাওয়া, (২) কম ঘুমানো, (৩) কম কথা বলা। হারাম থেকে বেঁচে থাকা; চোখের হেফাজত করা, কানের হেফাজত করা, জবানের হেফাজত করা। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সঃ)বলেন ‘হে সকল একটি মহান ও বরকতময় মাস তোমাদের সামনে উপস্থিত।এ মাসের রাএগুলোর মধ্যে এমন এক রাত বিদ্যমান,যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।আল্লাহ তায়ালা এ মাসে রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাএি জাগরণ করেছেন অতিরিক্ত ইবাদত সামিল। তিনি আরও বলেন যে ব্যত্তি এ মাসে একটি সাধারণ ভালো কাজ করবে অন্য মাসের তুলনায় তাকে একটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে। রাসুল (সঃ)আরও বলেন যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত পালন করবে, তাকে ৭০টি ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে।রমজানে হালাল খাদ্যের আয়োজন করতে হবে : ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টিকর খাবারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে। ইফতার ও সেহরির সুন্নত পালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি যত্নবান থাকতে হবে, যাতে ইবাদতের অসুবিধা না হয়। ইবাদতের অনুকূল ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ সুন্নতি লেবাসের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
রমজানের ফজিলত, আমল ও সকল জেলার রোজার সময়সূচি নিয়ে “টেকটিউনস অ্যাপস” তৈরি করেছে “Ramadan Calendar 2017” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৈনন্দিন আমল ও ইবাদত নিয়ে অ্যপসটিতে থাকছে কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ, কুরআনের বাংলা তাফসির, দোআ ও যিকির হিসনুল মুসলিম, নেক আমল, ইসলামের হুকুম আহকাম, হালাল হারাম সম্পর্কে শিখার জন্য ইসলামি বই পড়তে পারেন।নবির জিবনি, রাসুল ও রাসুলের জীবনী,সাহাবীদের জীবনী, ইসলামের ইতিহাস, সহীহ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ বাংলা, ফাজায়েলে আমল, রোজার ক্যালেন্ডার ২০১৭, রোজার নিয়ত
ইফতারের দোয়া, রোজা সম্পর্কিত জরুরি কিছু মাসআলা, রোজা বা সিয়ামের সহীহ নিয়ম, রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ, তারাবীহ নামাজ,রোযার ফজিলত, রমজান মাসের আমল, রমজানের প্রস্তুতির কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ,৩০ রমজানের দোয়া সমূহ, রোজার নিয়ত সম্পর্কিত মাসআলা, ইফতার এর সুন্নত আমলসমূহ, নামাজ পড়ার নিয়ম, তারাবীহ নামাজ,
লাইলাতুল কদরের প্রস্তুতি, রোযার ফজিলত আদব গুরুত্ব, রমজান সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত, ঈদুল ফিতরের কিছু সুন্নাত, রমজান সম্পর্কিত হাদিস, রমজানের দোয়া, নামাজের সময়সূচী, আল-কুরআনের সূরাহ অর্থ ও অডিওসহ, সম্পূর্ণ আল-কুরআন উচ্চারণ সহ তিলয়াত, রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ অ্যাপটিতে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
এন্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য অ্যাপ টি ডাওনলোড করতে পারেন। ডাওনলোড লিংকঃ https://goo.gl/LTGhvz অ্যাপটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে তুলে ধরা হল । বিস্তারিত অ্যাপটিতে পাবেন ।
রমজানে ওষুধ সেবন :
রমজানের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি অন্যতম। রোজা পালন ও তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য এই উভয় প্রকার প্রস্তুতি খুবই প্রয়োজনীয়। যাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ সেবন করেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করে নেবেন। যাঁদের শারীরিক ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে হয়, তাঁদেরও সেই উপযুক্ত সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
রোযা মানব শরীরে কোন ক্ষতি করে না :
মানব শরীরের উপর রোযার প্রভাব সম্পর্কে গবেষণায় প্রমানিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না কেবল ওজন সামান্য কমে, তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নয়। বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এইরুপ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রন তথা ডায়েট কন্ট্রোল অপেক্ষা বহুদিক দিয়ে শ্রেষ্ট। যারা মনে করে থাকে যে, রোযা দ্বারা, পেটের শূল বেদনা বৃদ্ধি পায় তাদের এই ধারনা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক।
কারন উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এই অতি কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূল বেদনা রোগীকে রোযা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোযাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশী বা খুব কম, রোযার পরে তাদের এই উভয় দোষই সেরে গেছে। এই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন যে, রোযার দ্বারা রক্তের পটাশিয়াম কমে যায় এবং তাদের শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এই ধারণা ও অমূলক। কারন পটাশিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া কম দেখা দিয়ে থাকে হৃদপিন্ডের উপর অথচ
১১ জন রোযাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রোকার্ডিগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোযার পূর্বেও রোযা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোযা দ্বারা এদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি।হে আল্লাহ যেভাবে রোজা পালন করলে তুমি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে আমাদের সবাইকে সেভাবে রমজানের রোযা পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
রোজা কাদের জন্য ফরজ :
রোজা ৮ শ্রেণী মানুষের ওপর ফরজ :-
১. তাহীরা অর্থাৎ পবিত্রতা হায়েজ-নেফাস মুক্ত হতে হবে।
২. বালেগ হওয়া। নাবালগের ওপর রোজা ফরজ নয়, অর্থাৎ ১২ বৎসর বয়সের কম বয়স হলে রোজা ফরজ হবেনা।
৩. সুস্থব্যক্তি হওয়া। শারীরিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা রাখার নিয়ম নাই। তবে সাধারন অসুখ বিসুখ হলে যদি সে রোজা রাখার উপযোগী হয় তবে সে রোজা রাখতে পারবে।
৪.সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া। পাগলের ওপর রোজা ফরজ নয়।
৫.স্বাধীন হওয়া। পরাধীন নয় এমন ব্যক্তি হওয়া।
৬.সজ্ঞান হওয়া। অর্থাৎ যিনি রোজা রাখবেন তিনি নিজ জ্ঞানে বা স্বেচ্ছায় আল্লাহর হুকুম পালন করবেন।
৭.মুকিম হওয়া। অর্থাৎ স্তায়ীবাসিন্দা হওয়া। মুসাফিরের ওপর রোজা ফরজের ব্যপারে একটু ভিন্নতা আছে। যেমন কষ্টসাধ্য ভ্রমন হলে পরবর্তীতে রোজা আদায়ের বিধান আছে। আমি মনে করি বর্তমানে সফর অনেক আরামের সাথে করা যায় তাই সফর অবস্থায় একমাত্র কাহিল হয়ে না পড়লে রোজা রাখা উচিৎ।
৮.মুসলমান হওয়া। মুসলিম ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা কোন অমুসলিমের জন্য ফরজ নয়।
যাদের উপর রোযা ফরজ নাঃ দশ প্রকার মানুষের জন্য রোযা ফরজ না
১. কাফের বা অমুসলিম। কারণ তারা ইবাদত করার যোগ্যতা রাখে না। ইবাদত করলেও ইসলামের অবর্তমানে তা সহি হবে না, কবুলও হবে না। যদি কোন কাফের রমজানে ইসলাম গ্রহণ করে তবে পিছনের সিয়ামের কাজা আদায় করতে হবে না।
২. অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার সিয়াম পালন ফরজ নয়।
৩. পাগল। পাগল বলতে বুঝায় যার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। যার কারণে ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না। এর জন্য সিয়াম পালন ফরজ নয়। যেমন পূর্বের হাদিসে উলে¬খ করা হয়েছে। পাগল যখনই সুস্থ হয়ে যাবে তখনই সে সিয়াম পালন শুরু করে দেবে। যদি এমন হয় যে দিনের কিছু অংশ সে সুস্থ থাকে কিছু অংশ অসুস্থ তাহলে সুস্থ হওয়া মাত্রই সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। সিয়াম পূর্ণ করবে। পাগলামি শুরু হলেই তার সিয়াম ভঙ্গ হবে না, যদি না সে সিয়াম ভঙ্গের কোন কাজ করে।
৪. অশীতিপর বৃদ্ধ যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না । এ ব্যক্তি যার বয়সের কারণে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার অনুভূতি চলে গেছে সে শিশুর মতই। শিশু যেমন শরিয়তের নির্দেশমুক্ত তেমনি সেও। তবে অনুভূতি ফিরে আসলে সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। যদি তার অবস্থা এমন হয় যে কখনো অনুভূতি আসে আবার কখনো চলে যায় তবে অনুভূতি থাকাকালীন সময়ে তার উপর সালাত, সিয়াম ফরজ হবে।
৫. যে ব্যক্তি সিয়াম পালনের সামর্থ্য রাখে না। এমন সামর্থ্যহীন অক্ষম ব্যক্তি যার সিয়াম পালনের সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। যেমন অত্যধিক বৃদ্ধ অথবা এমন রোগী যার রোগ মুক্তির সম্ভাবনা নেই—আল্লাহ্র কাছে আমরা এ ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই। এ ধরনের লোকদের সিয়াম পালন জরুরি নয়। কারণ সে এ কাজের সামর্থ্য রাখে না।
৬. মুসাফির। মুসাফিরের জন্য সিয়াম পালন না করা জায়েজ আছে। সফরকে যেন সিয়াম পালন না করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার না করা হয়।
৭. যে রোগী সুস্থ হওয়ার আশা রাখে।
৮. যে নারীর মাসিক চলছে। ঋতুকালীন সময়ে নারীর জন্য সওম পালন জায়েজ নয় বরং নিষেধ।
৯. গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী নারী। যদি গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারী নারী সিয়ামের কারণে তার নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে সে সিয়াম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে নিরাপদ সময়ে সে সিয়ামের কাজা আদায় করে নিবে।
১০. যে অন্যকে বাঁচাতে যেয়ে সিয়াম ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়। যেমন কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ; পানিতে পড়ে যাওয়া মানুষকে অথবা আগুনে নিপতিত ব্যক্তিকে কিংবা বাড়িঘর ধসে তার মাঝে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে যেয়ে সিয়াম ভঙ্গ করল।
যে সকল কারনে রোযা ভঙ্গ হয় :
১। ধুমপান করা।
২। রাত্র মনে করে সুবহে সাদেকের পর সাহরী খাওয়া।
৩। নস্যি গ্রহণ করা।
৪। ইচ্ছকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করা।
৫। বমি আসার পর তা গিলে ফেলা।
৬। কুলি করার সময় বা যে কোন ভাবে পানি গলার ভিতরে ঢুকে পড়া।
৭। দাঁতে আটকে থাকা ছোলা বা তার চেয়ে বড় ধরনের খাদ্যকণা গিলে ফেলা।
৮। সূর্যাস্তের পূর্বে সূর্য অস্তমিত হয়েছে ভেবে ইফতার করা। এগুলোতে শুধু কাযা (যে কয়টা ভাংবে সে কয়টা পরবর্তিতে রাখতে হবে)ওয়াজিব হয় । কাফফারা নয় ।কিনতু রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার পর দিনের অবশিষ্ট সময় রোযাদারের ন্যায় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
৯। রোযা স্মরণ থাকা অবস্থায় পানাহার করা কিংবা স্ত্রী সহবাস করা।এতে কাযা ও কাফফারা (একাধারে দুই মাস রোযা রাখা) ওয়াজিব হয়।
১০। নাকে বা কানে তেল, ষধ ইত্যাদি প্রবেশ করানো।
১১।মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়া অবস্তায় সুবহে সাদেকের পর জাগ্রত হওয়া।
যে সকল কারনে রোযা মাকরুহ হয় :
১। অহেতুক কোন জিনিস চিবানো বা চেখে দেখা।
২। রোযার কারনে অস্থিরতা বা কাতরতা প্রকাশ করা।
৩। গালাগালি ও ঝগড়া ফাসাদ করা।
৪। সিনেমা দেখা বা অন্য কোন কবিরাহ গুনাহে লিপ্ত হওয়া।
৫। সারাদিন নাপাক অবস্থায় থাকা।
৬। গীবত বা চোগলখোরী করা।
৭। কয়লা, মাজন, টুথ পাউডার, টুথ পেষ্ট বা গুল দিয়ে দাঁত মাজা।
৮। অনর্থক কোন জিনিস মুখের ভিতর দিয়ে রাখা।
৯। ইচ্ছকৃতভাবে অল্প বমি করা
১০। কুলি করার সময় গড়গড়া করা।
১১। নাকের ভিতর পানি টেনে নেয়া (কিন্তু সে পানি গলায় পৌছে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে)
১২। ইচ্ছকৃতভাবে মুখে থু থু জমা করে গিলে ফেলা ।
১৩। মিথ্যা কথা বলা।
যে সকল কারনে রোযার ক্ষতি হয় না :
১। অনিচ্ছাকৃতভাবে কানে পানি প্রবেশ করা।
২। ইনজাকশন নেয়া( খুবই জরুরি হলে)।
৩। নিজ মুখের থু থু কফ গিলে ফেলা।
৪। মাথা, শরীর বা মুখে তেল, ক্রিম, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করা।
৫। ঠান্ডার জন্য গোসল করা।
৬। ঘুমে স্বপ্নদোষ হওয়া।
৭। মিসওয়াক করা।
৮। অনিচ্ছকৃতভাবে বমি হওয়া।
৯। চোখে ওষধ, সুরমা বা ড্রপ ব্যবহার করা।
১০। আতর সুগন্ধি ব্যবহার করা বা ফূল ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া।
১১। অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় মশা, মাছি, ধোঁয়া বা ধুলাবালি প্রবেশ করা।
১২। ভুলক্রমে পানাহার করা।