তথ্য প্রযুক্তি- বর্তমানে ল্যাপটপ খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে এর বহন ক্ষমতাটা একে এ জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তবে এ প্রিয় জিনিসটি ঠিকভাবে যত্ন নিতে না পারলে বা না জানলে অকালেই মৃত্যুর কোলে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা নতুন তাদের জন্য খুব খারাপ সংবাদ এটি। তাই আমি তাদেঁর জন্য এ লেখাটা লেখছি। সময়ের পরিবর্তনে ল্যাপটপের ফিচার বাড়ছেই। তাই এর গুরুত্ব বুঝে যত্ন নেয়া দরকার।
অত্যাধিক গরমে করনীয়- গরম হলো ল্যাপটপের সবচেয়ে বড় এবং কঠিন সমস্যা। ডেস্কটপের চেয়ে ল্যাপটপ খুব বেশি এবং তারাতারি গরম হয়ে যায়। এর ফলে হ্যাং হওয়া, ঘন ঘন রিস্টার্ট হওয়া সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি কোন অভ্যন্তরীন পার্টস অতি তাড়াতড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ল্যাপটপের পার্টসগুলো কিন্তু খুব সহজলভ্য বা সস্তা নয়। তাছাড়া ডেস্কটপের মত ইচ্ছেমত যখন ইচ্ছা খোলা যায় না। তাই গরম থেকে সাবধান। নিন্মে কয়েকটি পদ্ধতি বললাম।
১। খোলামেলা, বাতাস চলাচল করতে পারে বা এসির ব্যবস্থা আছে এমন জায়গায় ল্যাপটপ ব্যবহার করুন। এর মাধ্যমে ল্যাপটপকে ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত ঠান্ডা রাখতে পারবেন।২। ল্যাপটপের কুলিং ফ্যান থাকে নিচে যেটা দিয়ে ভিতরের তাপ অপসারন করা হয়। সাইটেও থাকতে পারে। তাই ল্যাপটপ এমন জায়গায় বসান যেখানে নিচে তাপ চলে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কারণ ল্যপটপের নিচে যে ফাঁকা জায়গা থাকে তা তাপ অপসারনের জন্য যথেষ্ট নয়। এতে সহজে এটি গরম হয়ে যায়। কখনো ল্যাপ/তোশকের উপর ল্যাপটপ চালাবেন না।
৩। ল্যপটপের জন্য এখন কতগুলি কোলার মেসিন এসেছে। দাম হাজার এর ভিতর। এটা ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে ল্যপটপকে কিছুটা ঠান্ডা রাখা যায়। বিশেষ করে Compaq ব্রান্ডের মত ল্যাপটপগুলোর জন্য এটি ভাল কাজ করে। কারণ এ ব্রান্ডের পিসিগুলো অতিদ্রুত গরম হয়ে যায়।
৪। চার্জ দেওয়া অবস্থায় ল্যাপটপ চালালে ল্যাপটপ খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়। তাই অন্য কোন সমস্যা না থাকলে ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে ব্যাটারি থেকে ল্যাপটপ চালান। এতে ব্যাটারি ডিসচার্জ (ব্যাটারির চার্জ শেষ করা) করারও সুযোগ পাবেন। ( টিপসটি’র উপর আমাদের অভিজ্ঞ বন্ধুরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাই নিচে সবার মন্তব্যগুলো পড়ার অনুরোধ করছি।)
৫। অনেকে কিপ্যাডের উপর ধূলাবালি না পড়ার জন্য কভার ব্যবহার করে থাকেন। এর কারণে ল্যাপটপ উপরের দিকে যে তাপ ছড়াই তা বের হতে পারেনা। তাই এটি অতি প্রয়োজনীয় না হলে ব্যবহার করবেন না।
৬। ল্যাপটপ বন্ধ করে সাথে ব্যাগে ঢুকাবেন না। ১০/১৫ মিনিট বাইরে রেখে দিন। এতে এটি ঠান্ডা হবে তাড়াতাড়ি।
ব্যাটারির যত্ন- অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কোন ব্যাটারিতে চার্জ বেশি থাকে। আসলে চার্জ থাকা নির্ভর করে ব্যাটারির সেলের উপর। যে ব্যটারিতে যত বেশি সেল আছে তাতে তত দীর্ঘক্ষণ চার্জ থাকে। সাধারণত ব্যাটারি ৬ সেল (সম্ভবতঃ) বিশিষ্ট হয়। তবে আরও বেশি সেলের ব্যাটারিও আছে। যদিও প্রস্তুতকারকেরা এ ব্যাটারিগুলো সাপ্লাই দেয় না। এতে অনেক্ষণ ব্যাকআপ পাবেন ৬ সেলের ব্যাটারির চাইতে। তবে ব্যাটারিকে একটু যত্ন নিলে এর স্থায়িত্ব বাড়ে।
* নতুন যখন ব্যাটারি কিনবেন তখন একে নির্দেশনা অনুযায়ী ফুল চার্জ দিন যত ঘন্টা দরকার (সাধারণত ৩ ঘন্টা)। আর তা যদি একটানা দিতে পারেন (বাংলাদেশে তা একটু কষ্টকর বটে) তা হলে সবচেয়ে ভাল। প্রয়োজনে খুব ভোরে দিন যখন বিদ্যুত থাকে। * চার্জ ফুল হয়ে গেলে চার্জার খুলে ফেলুন। অযথা চার্জে লাগিয়ে রাখবেন না। এতে ব্যটারির কার্যক্ষমতা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, মেশিনের জন্যও ক্ষতিকর। * নতুন নেওয়ার পর অন্তত ৩/৪ বার ডিসচার্জ করে (চলতে চলতে চার্জ শেষ হয়ে একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া) ফুল চার্জ দিন। আর তা সম্ভব হলে মাসে বা ২ সপ্তাহে ১ বার ডিসচার্জ করুন। মোবাইলের ব্যাটারিতে ও এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
সফটওয়ারগত সমস্যা- ল্যাপটপগুলো যেহেতু ভিস্তা পরবর্তী অপারেটিং সিস্টেম কমপেটিবল করে তৈরি করা হয়। তাই এতে ভিসতাপূর্ব ভার্সন যেমন এক্সপি সেটআপ হয়না। তাছাড়া আছে মাদারবোর্ড ইন্সটল করতে ঝামেলা। মেশিনের সাথে মাদাবোর্ড সিডি থাকেনা বিধায় মাদারবোর্ড নিয়ে ঝামেলা হয়। এজন্য আমার এক্সপি সেটাপ দিনযেকোন ল্যাপটপে পোষ্টটি দেখতে পারেন। তাহলে এক্সপি ভালভাবেই চালানো যায়।
আঘাত ও ধূলাবালি মুক্ত- ল্যাপটপকে আপনি কাচের গ্লাসের সাথে তুলনা করতে পারেন। তাই যত সম্ভব একে যেকোন আঘাত থেকে মুক্ত রাখুন। বিশেষ করে এর পর্দা। এর পর্দা খুব আঘাত সেনসেটিভ। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এরকম জায়গা বা ছোট্ট বাচ্চা আছে এরকম জায়গায় না রাখাই ভাল। কারণ ল্যাপটপের পার্টসগুলো যেমন দামী তেমনি বদলানোও একটি জটিল কাজ। আলাদা কি প্যাড ব্যবহার করেন। শুধু জরুরী কাজ ছাড়া এর কী-প্যাডে কাজ না করায় ভাল। কারণ অরজিন্যালটা গেলেই মাথাই হাত দেবেন। ধূলাবালির কথাতো না বললেই চলে। কারণ ধুলাবালি কোন জিনীসের জন্যই ভাল নয়। তাই একে ধূলাবালি মুক্ত রাখুন। মাঝে মধ্যে পরিস্কার করতে পারেন।
স্ক্রীন- ল্যাপটপের স্ক্রীনটা সবচেয়ে স্পর্শকাতর জিনীস। তাই এটাতে যেকোন আঘাত, চাপ বা ধাক্কা, আঙ্গুল দিয়ে টিপে দেখা হবে আপনার সবচেয়ে বোকা/অবুদ্ধিমান কাজের মধ্যে একটি। তাই স্ক্রীনটা যাতে সামান্য আঘাত থেকেও মুক্ত থাকে সে দিকে নজর রাখুন। আর না হয় কপাল দুঃখ আছে। মুছার প্রয়োজন হলে টিস্যু পেপার, তুলা বা মসৃন কাপড় যা ল্যাপটপের সাথে প্রস্তুতকারকেরা দিয়ে থাকে সেটি ব্যবহার করুন। খুব সাবধানে আঁচড়া না লাগে মত করে মুছে নিন।