প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোনকালে এ কথা বলেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন, যুব সংগঠক অমীয় প্লাবন চক্রবর্তী, সেলফ এমপ্লয়ার সুলতানা পপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। যুব ও ক্রীড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনোয়ারুল করিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জনকে জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুবকদের সংগঠিত করে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন, উদ্যমী করেছিলেন। এই যুবকরাই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। এখন সবাইকে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারো কাছে হাত পাতব না, আত্মমর্যাদাশীল, কর্মউদ্যমী হয়ে উঠব। আমরা চাই না আমাদের যুবশক্তি কোনোভাবেই বিপথে যাক এবং তাদের অভিভাবকদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াক। তাদের অবশ্যই মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো কোনো সুস্থ ধারা নয়, এগুলো সবসময়ই যুবসমাজের সুন্দরভাবে বিকাশের অন্তরায়, বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম কোনোভাবেই মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, হায়াত এবং মউতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। এসব তাঁরই হাতে। মানুষ হত্যা এবং ধর্মীয় জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারীর জায়গা হবে নরকে।
এ বছরের জাতীয় যুব দিবসের প্রতিপাদ্য আত্মকর্মী যুবশক্তি, টেকসই উন্নয়নের মূলভিত্তি অত্যন্ত যথোপযুক্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে যুব জাগরণ ঘটেছে। বিশেষ করে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণ পেয়ে যুবকরা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে তাদের মানবসম্পদে পরিণত করছে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসংগে জাতির পিতার একটি উদ্ধৃতির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯ আগস্ট ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে যুবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কাজ কর, কঠোর পরিশ্রম কর, না হলে বাঁচতে পারবে না। শুধু শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নাই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুল, যাতে সত্যিকার মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।’
জাতির পিতার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যুবদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার সরকার একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার সরকার গৃহীত যুব উন্নয়নমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটায় ২০০৯ সালে সারাদেশে পলিটেকনিকে ভর্তির আসন ছিল যেখানে মাত্র ২৫ হাজার, বর্তমানে তা ১ লাখ ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬২ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৯ জনকে ১ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবদের মধ্যে ২০ লক্ষ ২১ হাজার ১০৩ জন আত্মকর্মে নিয়োজিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিসে যুব নারীদের অংশগ্রহণ শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। তাদের এই বিপুল অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ক্রমান্বয়ে সারাদেশে সম্প্রসারিত হবে।
এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার অপর একটি বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সময় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও দেশগড়াকে বেশি কঠিন উল্লেখ করে বলেন, আমরা যদি একটু চেষ্টা করি, একটু বেশি পরিশ্রম করি, সবাই সৎপথে থেকে সাধ্যমতো নিজের দায়িত্ব পালন করি এবং সবচাইতে বড় কথা, সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আমি বিনাদ্বিধায় বলতে পারি ইনশাআল্লাহ কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের স্বপ্নের বাংলা আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
যুবসমাজকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে -জাতীয় যুব দিবসে প্রধানমন্ত্রী
অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবসমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থেকে নিজস্ব মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনকে সুন্দর করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যুবক। যা পৃথিবীর অনেক দেশেরই নেই। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পূর্ণ সদ্ব্যবহারকল্পে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কর্মকা-ে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্তকরণের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুবসমাজকে ‘দেশের প্রাণ এবং উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার চালিকাসক্তি’ বলেও উল্লেখ করেন।