অগ্রসর রিপোর্ট: নির্বাচন বানচালের নামে ট্রেনে আগুন দিয়ে মা ও শিশুকে হত্যা করার বিষয়টি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, বিএনপির রাজনীতি দেশের মানুষকে পোড়ানো। এরা যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
শুক্রবার বিকালে বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর বরিশাল সফরে গেছেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহেনাও বরিশালে গিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে করে আপনাদের কাছে এসেছি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়বেন, বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, দেশের একজন রাষ্ট্রপতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় আসে জিয়াউর রহমান। এরপর শুরু হয় হত্যা, গুম, খুন। ক্ষমতা দখল করে নিজেদের ভাগ্যে পরিবর্তন করলেও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেনি বিএনপি। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে, সেই সময় ছিল দেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ। তখন সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার হত্যা-খুন-গুম শুরু করে। আমাকেও হত্যা করার জন্যও বোমা হামলা করা হয়েছিল। এই বাংলাদেশকে তখন তারা হত্যা সন্ত্রাস জঙ্গীবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ,তখন বিএনপি মাত্র ত্রিশটা সিট পেয়েছিল, আওয়ামী লীগ সিট পেয়েছিল ২৩৩টা সিট। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ বদলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ আর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। বাংলাদেশে মানুষ একবেলা খেতে পারতো সে এখন দুই তিন বেলা খেতে পারে আর। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করেছি আমরা।
তিনি বলেন, এক সময় বরিশাল ছিল শস্য ভাণ্ডার। বরিশালের সেই সুনাম আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। এই অঞ্চলে খাদ্য রাখার জন্য আমরা সাইলো নির্মাণ করে দিচ্ছি। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। এই বরিশালে আমরা নৌবাহিনীর ঘাঁটি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, এই বরিশালে আমার ফুপু বাড়ি। আমার এখনও মনে আছে ছোটবেলায় বিকালে স্টিমারে উঠতাম সকালে এসে নামতাম। ঘোড়ার গাড়ি করে ফুপুর বাড়ি যেতাম। এখন আর ঘোড়ার গাড়িতে করে যেতে হয় না, গাড়ি চলে।
ইসলাম হচ্ছে শান্তি ধর্ম কেউ যেন জঙ্গিবাদের জড়িয়ে না পড়ে এজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন, দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগী হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তির দিকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। আমরা যে কথা দিয়েছিলাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা বাস্তবায়ন করেছি। দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম বাংলাদেশে দিন বদলে গেছে।
নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে দিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের যোগাযোগের জন্য আমরা পদ্মা সেতু করে দিয়েছি। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে মনে হয় না আমরা বাংলাদেশে আছি, মনে হয় কোন ইউরোপের রাস্তা দিয়ে আমরা চলছি।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করার আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেটা আমরা করে দিয়েছি এখন আমাদের লক্ষ্য ২০০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করা। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট জনশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের জনগণকে গড়ে তুলবো। স্মার্ট বাংলাদেশে সকল কিছুই হবে স্মার্ট। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের তরুণ-তরুণীদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশুনা না করলে নিজের জীবন ও দেশকে উন্নতি করা যাবে না।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাতি শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য ট্রেন ও বাসে আগুন দিচ্ছে বিএনপি। মা তার শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ওই অবস্থায় আগুন দিয়ে তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই দৃশ্য বিশ্ব বিবেক কে নাড়া দিয়েছে। ট্রেনের বগি ফেলে মানুষ হত্যা করার ফাঁদ ও টেনে আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন ঠিক এভাবেই তারা ২০০১ সালে শুরু করেছিল, এরপর ২০১৩-১৪ সালে আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করে। এখন আবার নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। আমি ধিক্কার জানাই এই বিএনপি জামায়াতকে। বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী দল এই সন্ত্রাসী, এ দলের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। কারণ তারা মানুষ পোড়ায়, দেশের মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য আর তাদের রাজনীতি দেশের মানুষকে পোড়ানো। যারা মানুষ পুরানো রাজনীতি করে তাদেরকে দেশের মানুষ চায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির দোসর হচ্ছে যারা যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, যাদেরকে সাজা দিয়েছি তারা। বিএনপির নেতা হচ্ছে চোরাকারবারি মানি-লন্ডারিং, দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারী, হাওয়া ভবন খুলে কমিশন বাণিজ্য করা এই হল বিএনপি নেতা। আরেকজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এরা যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দিবেন। এই নৌকা মার্কা বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, এই নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। দেশের এই উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে নৌকা মার্কা ভোট দিতে হবে। কারণ একমাত্র আওয়ামী লীগই এই উন্নয়ন অগ্রগতি করতে পারবে।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। সঞ্চালক ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।
জনসভায় আরও বক্তব্য দেন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, বরিশাল-৬ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাফিজ মল্লিক নৌকা, বরিশালের সন্তান অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান, বরিশাল-২ আসনে জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, পিরোজপুর-২ আসনে জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ঝালকাঠি-১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ।