অগ্রসর রিপোর্ট :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্পসমূহ সম্পন্ন করতে আওয়ামী লীগকে আরো এক মেয়াদ ক্ষমতায় রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই এই সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে এবং দল ক্ষমতায় থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালের বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৫ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। দল ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমরা একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে দশ বছর মেয়াদী একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হবে।
তিনি পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বড় ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য আরো এক মেয়াদ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা বিভিন্ন সেক্টরে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এ সকল প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য আরো এক মেয়াদ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন’।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যদি তাঁর দল ক্ষমতায় থাকে তাহলে জনগণের উন্নয়ন হবে এবং ক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতার ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের পর থেকে ক্ষমতায় থাকায় জিডিপি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। মাথা পিছু আয় ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার হয়েছে। চলতি অর্থবছরে চার লাখ কোটি টাকার অধিক বাজেট দেয়া সম্ভব হয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশ বছর মেয়াদী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জনগণকে আর কখনোই দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে হবে না এবং ক্ষুধায় কষ্ট করতে হবে না।
দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের হাতে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে জীবন দিতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও কমিশন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে- এটা জনগণের অধিকার।
তিনি বলেন, ‘এটা তাদের স্বাধীনতা, তাদের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার এবং এ সাংবিধানিক অধিকার অব্যাহত থাকবে। জনগণ যাকে ভোট দিবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বল এখন জনগণের কোর্টে। জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভোট দিবে। তারা সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।’
আওয়ামী লীগকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা দুর্নীতি ও লুটপাটে রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা আন্দোলনের নামে ৫৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেয় এবং বিপুল সংখ্যক লোককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের কথা ভুলে যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না। তিনি আরো বলেন, বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দেশের মানুষ তা ভুলে যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১-০৬ পর্যন্ত বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। তিনি বলেন, তাদের নির্যাতনের হাত থেকে নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি। তারা ঢাকা এবং সারাদেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। কিন্তু আমরা কোন প্রতিশোধ নেইনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এতোই উদার যে তা ভুলে গেছি। এমনকি সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও ওই সময়ে তারা কি ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিল তা ভুলে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি দেশ পরিচালনার জন্য ক্ষমতায় আসেনি, তারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুঃশাসনের জন্য এসেছিল। তিনি আরো বলেন, তারা হাওয়া ভবন চালু করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
বন্যা মোকাবেলায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর দেশে বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে, কাজেই জনগণ দুর্ভোগে পড়বে না। তা সত্ত্বেও আমরা খাদ্য আমদানি করছি। কাজেই আমরা সময় মতো জনগণের মাঝে খাদ্য পৌঁছে দিতে পারবো।’