অগ্রসর রিপোর্ট: ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান, তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান এবং সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, তার ভাই শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয়ের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দেশত্যাগে ফের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
সোমবার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন পৃথক পৃথক শুনানি শেষে এসব আদেশ দেন।
এদিন দুদকের পরিচালক আব্দুল মাজেদ, উপপরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন, ওমর ফারুক, আনোয়ার হোসেন ও উপপরিচালক রেজাউল করিম প্রত্যেক পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পৃথক পৃথক আবেদন করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এসব আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত এসব আদেশ দিয়েছেন।
সাদেক খানের পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, সাদেক খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ভূমি দস্যুতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সাদেক খান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন ৪৭ নং ওয়ার্ড বর্তমানে ৩৪ নং ওয়ার্ড এর চারবারের কাউন্সিলর। এসব দায়িত্বে থেকে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়। অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশগমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
আশরাফের আবেদনে বলা হয়, আনোয়ারুল আশরাফ খানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে আত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি তিন সদস্যের টিমের নিকট অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। আশরাফ খান তার অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় আনুমানিক ৫১ লাখ টাকার কৃষি জমি, প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট, ভাটারা থানার জোয়ারসাহারা মৌজায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট এবং রাজউক এর উত্তরা ৩য় প্রকল্পের প্রায় ৩২ লাখ টাকার প্লট এবং তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানার নামে বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক কোটি টাকার প্লটি, ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন মর্মে গোপন সূত্রে জানা যায়। আশরাফ খান এবং তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানা অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মুন্নুজান সুফিয়ানের আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠজন দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
মতিউরের আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব কর্তৃক দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট কমিশনের পূর্বানুমোদনক্রমে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের আদালত বিদেশ গমন নিষেধাজ্ঞা দেন। মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের অন্যানা সদস্যরা দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ প্রদান করা প্রয়োজন।