অগ্রসর রিপোর্ট :মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আনা নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে চীন। সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেয় এবং অং সান সু চিসহ কয়েকশ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে।
এরপর থেকে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তারা একটি সুপ্রিম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছে যা মন্ত্রীসভার ওপরে থাকবে। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে যদিও প্রতিরোধ এবং বেসামরিক নাগরিকদের অসন্তোষ বাড়তে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসে কিন্তু চীন সমর্থন না করায় তারা কোন যৌথ বিবৃতি দিতে পারেনি। খবর বিবিসির
যৌথ বিবৃতি দিতে হলে চীনের সমর্থন দরকার, কারণ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার কারণে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে চীনের।
বৈঠকের আগে মিয়ানমারে থাকা জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা নেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল সামরিক বাহিনী মেনে নিতে অসম্মতি জানানোর পর এই অভ্যুত্থান ঘটে।
ক্রিস্টিন শ্রেনার বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, নির্বাচনের ফলে সু চির দলের জন্য বিপুল ব্যবধানে জয় নিশ্চিত হয়েছিল।’
এদিকে সেনা অভ্যুত্থানের তৃতীয় দিনে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। দেশটির বড় শহরগুলোর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিকিৎসক, ফিজিশিয়ানসহ সেবাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেকেই তাদের চাকরি ছেড়েছেন। অনেক চিকিৎসক রোগীর কথা বিবেচনায় নিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা জান্তা সরকারের নতুন মন্ত্রীসভাকে স্বীকৃতি দেবে না বলে জানিয়েছেন। একই সাথে তারা রেড রিবন মুভমেন্ট মিয়ানমার ২০২০ নামে কর্মসূচীও ঘোষণা করেছে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এলিয়ট প্রাসে-ফ্রিম্যান বলেন, ‘গ্যাসলাইটিং বা পেছন থেকে নিয়ামক হিসেবে কাজ করার মতোই এই বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে জেনারেলদেরকে চীন স্পষ্ট করে না হলেও জোরালো সমর্থনের আভাস দিচ্ছে। চীন এমনভাবে আগাচ্ছে যে মনে হচ্ছে, এটা পুরোপুরি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় যাতে মন্ত্রীসভায় রদবদল দেখা যাচ্ছে। অন্তত চীনের রাষ্ট্রীয় মাধ্যম এভাবেই বিষয়টিকে চিত্রিত করছে।’
যদিও জাতিসংঘের এই বিবৃতি তাৎক্ষনিকভাবে কোন ফল বয়ে আনবে না, তারপরও এটা আন্তর্জাতিক সুসংহত প্রতিক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। যা আপাতত আসছে না বলে মনে হচ্ছে।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের লেখক এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক সেবাস্টিয়ান স্ট্রাংগিও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে চীনের সন্দেহ প্রবণতার সঙ্গে তাদের বর্তমান অবস্থান খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
গত কয়েক দিন ধরে চীন বলে আসছে যে, নিষেধাজ্ঞা কিংবা আন্তর্জাতিক চাপ পুরো পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে। পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারকে দূরে ঠেলে রাখার বিষয়টি থেকে কৌশলগতভাবে সুযোগ নেয় চীন। তার মানে এই নয় যে সেনা অভ্যুত্থানে চীন খুশি, বলেন সেবাস্টিয়ান স্ট্রাংগিও।
তিনি বলেন, ‘এনএলডির সঙ্গে তাদের বেশ ভাল বন্দোবস্ত করা ছিল এবং অং সান সু চির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তারা অনেক বিনিয়োগও করেছে। সামরিক বাহিনীর ফিরে আসা মানে হচ্ছে চীনকে নতুন করে মিয়ানমারের এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কাজ করবে হবে। এরা ঐতিহাসিকভাবেই চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান।’
