অগ্রসর রিপোর্ট : চট্টগ্রামে পাঁচ বছর আগের আলোচিত মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে হাজির করা হলে আদালত এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত ৫ দিন রিমান্ডের অনুমতি দেন। একই সাথে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে রিমান্ডের প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর বাবা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দুপুর ১২টার দিকে পাঁচলাইশ থানায় যান। তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়ার সাথে কথা বলে মামলার এজাহার জমা দিলে পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করে।
মামলায় পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন : মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও শাহজাহান মিয়া। আগে থেকে পিবিআই হেফাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রায় পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। সে সময় বাবুল আক্তার নিজেই বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দেশের বহুল আলোচিত হত্যা মামলাটি তদন্ত করছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পিবিআই’র ওপর।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, বাবুল আক্তার বাদী হয়ে ২০১৬ সালে যে মামলা দায়ের করেন, সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পিবিআই’র দুই কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। পরে সেটি নথিভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, তদন্তে আগের মামলার বাদী ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
পিবিআই প্রধান, ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আজ সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
এর আগে, পিবিআইয়ের নির্দেশনা পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাবুল আক্তার পাহাড়তলীস্থ সংস্থাটির চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে আসেন। সেখানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একটি টিম তাকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মিতু হত্যার তিনদিন পর বাবুল আক্তার তার ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুল হককে তিন লাখ টাকা দিতে বলেছিলেন। সাইফুল বিকাশের মাধ্যমে ওই টাকা গাজী আল মামুন নামে এক ব্যক্তির কাছে পাঠান। মামুন ওই টাকা মুসা, ওয়াসিমসহ মিতু হত্যা মামলার আসামিদের ভাগ করে দেন। গতকাল মঙ্গলবার বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ও মামুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দীনের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। সেখানে দু’জনই বাবুলের নির্দেশে মিতু হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।