অগ্রসর রিপোর্ট : দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণার অভাবের বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে জোর দিতে চিকিৎসকদের বিশেষ তাগিদ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসাবিদ্যার ওপর দেশে গবেষণা না হওয়া অত্যন্ত দুঃখের বলেও আক্ষেপ করেন সরকারপ্রধান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে সোমবার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস প্রান্তে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটু দঃখের কথা বলবো যে, আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণার খুব অভাব। চিকিৎসাবিজ্ঞানে কিন্তু গবেষণা হচ্ছে না। হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন গবেষণা করে থাকেন। বর্তমান যুগে গবেষণা কিন্তু অপরিহার্য।’
‘গবেষণার জন্য আমরা বিশেষ অনুদানও দিই। আমরা যে একটা শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড আমরা করেছি এবং প্রধানমন্ত্রী ফেলোশীপের ব্যবস্থাও আমরা করেছি। সেখানেও কিন্তু কেউ এই গবেষণার জন্য আর্থিক সহায়তা ফান্ড পেতে পারেন। আপনারা দয়া করে একটু গবেষণার দিকে দৃষ্টি দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তি উদভাবন হচ্ছে পাশাপাশি নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় চিকিৎসাসেবা বা ভ্যাকসিন দেওয়া কার্যক্রম নিয়ে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা সেবা দিয়েছি। যার ফলে আমাদের দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়েছে কিন্তু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। আমরা ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি, যেটা অনেক উন্নত দেশ পারেনি।’
‘আমাদের ভূখন্ড ছোট কিন্তু ১৭ কোটি মানুষ, এত মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং তাদের কাজ করানো এটা কিন্তু একটা কঠিন দায়িত্ব। সেই কঠিন দায়িত্বগুলো সবাই পালন করে যাচ্ছেন।’
চিকিৎসকদের গ্রামে থাকতে না চাওয়া দুঃখের:
চিকিৎসকরা ঢাকার বাইরে থাকতে চান না আর সেটিও দুঃখের বিষয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গ্রাম বা উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দঃখের বিষয় সবাই ঢাকাকেন্দ্রিক বেশি থাকতে চান। ঢাকার বাইরে কেউ থাকতে চান না। এখন কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা গ্রামে বিদ্যুৎ আছে। প্রত্যেকটা গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। গ্রাম পর্যায়ে ওয়াইফাই কানেকশন আছে।
‘গ্রামে এখন সব রকমের ব্যবস্থা আছে। আর আমরা সেই সঙ্গে সঙ্গে অনেক উপজেলায় বাসস্থানের ব্যবস্থাটাও করে দিচ্ছি। কাজেই যারা যখনই যে বিষয়ে দায়িত্ব পাবেন তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যদি এই সেবা যাতে নিশ্চিত হয় এতগুলো হাসপাতাল এত চমৎকার জায়গা করে দিয়েছি। আর সেখানে যদি যন্ত্রপাতিগুলোও আরেক জায়গায় পড়ে থাকে, সেগুলোর যথাযথ ব্যবহারও হয় না তা দুঃখের।’
‘কাজেই নতুন আধুনিক যে যন্ত্রপাতি আসছে সেগুলো ব্যবহার করার মতো লোক আপনাদের ট্রেনিং দেওয়াতে হবে। প্রয়োজনে দেশে না হোক বাইরের থেকে ট্রেনিং করিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সেগুলোর দিকে সবাই একটু দৃষ্টি দেবেন আমি সেটাই চাই।’
সেবাদানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সর্বসেরা:
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবাইকে সেবাদানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সর্বসেরা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এই মেডিকেল কলেজ আরও উন্নত হোক সেটাই আমি চাই। ভবিষ্যতে যারা নতুন প্রজন্ম আসবে তারা আরও জ্ঞান সম্পন্ন হবে। প্রয়োজনে আমরা দেশে বিদেশেও শিক্ষা দিয়ে নিয়ে আসবো। ট্রেনিং করাবো।’
‘আরেকটা কাজ মনে হয় করা উচিৎ যে আমরা দরজা বন্ধ করে না রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন নামী হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের কিছু দিনের জন্য নিয়ে আসতে পারি। তাদের অপারেশন বা তাদের চিকিৎসা পাশে থেকে দেখলে আমাদের অনেক ডাক্তাররা উপকৃত হবেন, শিখতে পারবেন, জানতে পারবেন।
সীমিত আকারে হলেও এই সুযোগ সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু বিদেশ থেকে ভালো ডাক্তারদের আনতে পারি। তাতে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানটা আরও উন্নত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’