স্টাফ রিপোর্টার: পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মানবসৃষ্ট দুর্যোগে তার সরকার আর কোন মৃত্যূ দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, বিশ্বের সকলের মতো তিনিও মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু প্রত্যাশা করেন। তার সরকার আর কোন রানা প্লাজা দেখতে চায় না।
আজ ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্বব্যাংক ও জাইকা’র অর্থায়নে বাংলাদেশে আরবান রিসাইলেন্স শীর্ষক আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্ট ও আরবান রিসাইলেন্স প্রজেক্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোন্ এলাকায় কি ধরণের ভবন হবে, সে বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপ করে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জেও ভবন নির্মাণ যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা সেটিও দেখতে হবে। ভবন নির্মাণে সরকার প্রণীত নীতমালা সকলকে মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, মানবসৃষ্ট অনাচারে পৃথিবী আজ কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখী। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এরই প্রভাবে পৃথিবীর অনেক অঞ্চল পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সিডর আক্রান্ত এলাকা আজও স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ত্রিশ ইঞ্চি পরিমান পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ুর এই বিরূপ প্রভাবে এবং হিটওয়েভে অগণিত মানুষ মারা যাচ্ছে।
ভারত ও পাকিস্তানে গত ছয়মাসে কয়েক হাজার মানুষ হিটওয়েভে প্রাণ হারিয়েছেন উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, গত একশ’ বছরেও এত মানুষ মারা যায়নি।
তিনি বলেন, আমেরিকায় ১৯৮০ সালে ১০ হাজার ও ৮৮ সালে ১৭ হাজার, ইংল্যান্ডে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এ দশ বছরে ৪০ হাজার, রাশিয়ায় ২০১০ সালে ৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি পৃথিবীর ছয়শ’ ষোলটি শহরের ওপর একটি জরীপ চালানো হয়, সেখান থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যার ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।
কেবল ঢাকা শহরই দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপ্রবণ, তা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের নিমস শহর, ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউওরিয়ান্স, ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন এবং দুপ্তাহ আগে ভারতের চেন্নাই শহরও ভয়াবহ বন্যায় তছনছ হয়ে যায়।
সঠিকভাবে মাটি পরীক্ষাসহ যথাযথ বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ করায় গোটা দেশের অপরিকল্পিত ভবনগুলো ঝুঁকিপ্রবণ হয়ে পরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিল্ডিং নির্মাণে সকলকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত সকল শর্ত অনুসরণ করে ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো ভূমিকা পালনেরও তিনি আহবান জানান।
বর্তমান বিশ্বে বেশীরভাগ মানুষ শহরাঞ্চলে বসবাস করায় প্রতিটি দেশের জন্য শহরাঞ্চলের ক্ষতি ব্যাপক ক্ষতির কারণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৯৫০ সালেও শহরে বসবাস করতো শতকরা ৩৩ ভাগ মানুষ। বর্তমানে তা ৫০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। ২০৫০ সালে এ সংখ্যা শতকরা ৮০ ভাগে দাঁড়াবে বলেও তিনি জানান।
মানব সভ্যতার বিপর্যয় মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে হবে। মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণ জানতে এবং প্রতিকারে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষকে সচেতনতার মাধ্যমে ভুমিকম্পের মতো অনেক অপ্রতিরোধ্য দুর্যোগেও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর ভিসি প্রফেসর ড.জামিলুর রেজা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আব্দুল্লাহ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো: শাহ কামাল, জাইকা‘র সিনিয়র প্রতিনিধি হিরুউকি তমিতা, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারু এস ফর্ণি এবং জাইকার চীপ রিপ্রেসেনটেটিভ মিকিও হাতাইডা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ নগর অবকাঠামো ও ভবন তৈরিতে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। যেমন, তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জিডিপি’তে শতকরা ১৫ভাগ অবদান রাখা সত্ত্বেও এ খাতটির টেকসই সম্প্রসারণ অব্যহত রাখতে ‘সেফটি স্ট্যান্ডার্ড’ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।