মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরায় ঈদের বাজার জমে উঠেছে। ঈদকে সামনে রেখে শহরের বিভিন্ন বিপনি বিতান গুলো সেজেছে নানা সাজে। ইতিমধ্যে শহরের বেবী প্লাজা, নুর জাহান প্লাজা, সুপার মার্কেট, কাজী টাওয়ার মার্কেট, মরিয়ম প্লাজা, খান প্লাজা, জমজম মার্কেট, আল-আমিন মার্কেট, জুতাপট্টির দোকান মালিকগুলো ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নানা রঙের পরসা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। ঈদ কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে ফ্যাশান হাউজ, বিপনী বিতান আর কসমেটিকস্ কর্ণার। কেনাকাটায় শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও মহিলাদের ব্যস্ততা বেড়েছে ।
শহরের হাজী কমপ্লেক্সে অবস্থিত দোয়েল ফেব্রিক্স এন্ড টেইলার্স সত্তাধিকারী আলাউদ্দিন হোসেন জানান, পনের রোজার পর থেকে দোকানে খুব ভীড়। আমরা ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে প্রতি বারই নিত্য-নতুন আধুনিক ডিজাইনের থ্রি-পিচ সংগ্রহে রাখি । এর মধ্যে লেটেষ্ট থ্রি-পিচ হচ্ছে বাহুবলি। এটা তরুণীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বাহুবলি থ্রি-পিচ ২০০০-৬০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তাড়াছা পাকিস্তানী লাকা কালেকশন, ডিকে ফ্যাশান, পিচ লোন, স্টাইল , জামদানি থ্রি-পিচও মেয়েদের খুবই পছন্দ। পাশাপাশি ফ্লোর টাচ থ্রি-পিচ, পাখি থ্রি-পিচ, সাররা থ্রিপিচ, চায়না থ্রিপিচের কদর অনেক বেশি। এসব থ্রিপিচ ১৫০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ।
পোশাক তৈরি করতে আসা টুকটুকি নামের এক তরুনী জানান, এবারের ঈদে আমার পছন্দের তালিকায় রয়েছে বাহুবলি থ্রীপিচ। বাহুবলি থ্রি-পিচের কারুকাজ ভালো হওয়াতে এটি আমার খুবই পছন্দ। সুপার মার্কেটের অন্যতম গামেন্টস লিখন ফ্যাশানের সৈয়দ ফজলুল ইকবাল প্রিন্স জানান, প্রতি বারই আমি ঈদ কালেকশনে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক সংগ্রহে রাখি। এবার ঈদে চায়না ফ্রক, সাররা, ফ্লোর টাচ পোশাক ভাল চলছে। প্রতিবারই আমার বিক্রি ভাল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।
কেনাকাটা বা ফ্যাশান সচেতনতাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও ছেলেদের জন্যও আয়োজনের কমতি থাকে না পোশাক বাজারে। মেয়েদের পাশাপাশি পছন্দ মত আধুনিক মর্ডান রেডিমেড ড্রেসটি বেছে নিতে এখন ছেলেদেরও চলছে কেনাকাটার ব্যস্ততা। মাগুরা শহরের বিভিন্ন ফ্যাশান হাউজ ,শপিং মল এবং ছেলেদের ছোট বড় রেডিমেট পোশাকের মার্কেটের গিয়ে দেখা গেছে নতুন কাট ও ডিজাইনের ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের শার্ট ও টি শার্টের কালেকশন রাখা হয়েছে দোকান গুলোতে। রং বাহারি টি শার্টের পাশাাপাশি এবার ক্যাজুয়াল ব্র্যান্ডেড প্রিন্টের শার্টের কদর রয়েছে এবার। বেবী প্লাজা শপিং মলের নিউ মডেল গার্মেন্টসের সত্ত্বাধিকারি মাসুদ পারভেজ জানান, এবার ঈদের জন্য তরুনরা জিন্স প্যান্ট আর বাহারী রঙের পাঞ্জাবী কিনছেন বেশি । পাশাপাশি আমার দোকানে ছোট শিশুদের নানা ধরনের বাহারি পোশাকের আয়োজন। এবার বেশি গরম পড়ায় শিশুদের সূতির পোশাকের চাহিদা বেশি। পাশাপশি ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের নামে ভূতু, রাখি বন্ধন, কিরণমালা, ঝিলিক, বাবা সূট ড্রেস বেশির ভাগ মেয়েদের পছন্দ । তিনি আরো জানান, ছেলেদের জিন্সের প্যান্ট দেশি ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকা, চায়না থাই ১৬’শ টাকা ২৫’শ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে । টি শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ২শ টাকা ১৫শ টাকা পর্যন্ত । ঈদের প্রথম থেকেশেষ পর্যন্ত পুরুষের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো পাঞ্জাবী। তাই শহরের বিভিন্ন বিপনি-বিতানগুলোতে সাজানো হয়েছে দেশি বিদেশী সব পাঞ্জাবী দিয়ে । ঈদ উপলক্ষে এসব পাঞ্জাবীর রং এবং নকশায় ও আনা হয়েছে ব্যতিক্রমী ঢং। চিরাচরিত সাদা, কালোসহ নীল, বেগুনী, জলপাই, হলুদ, ছাইসহ হালকা রঙে নতুনত্ব আনা হয়েছে।
বেবি প্লাজাসহ শহরের সুপার মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ী জানান, এবার সাদার পাশাপাশি সূতি, প্রিন্ট স্টাইফসহ বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবী ক্রেতারা কিনছেন। কেউ কেউ আবার এ্যাম্বোটারি ও হাতের তৈরি পাঞ্জাবীও কিনছেন।
পোশাক কিনতে আসা গৃহিনী নাজমুন নাহার জানান, শিশুদের পোশাকের এবার খুব দাম। পছন্দের মত ভাল পোশাক পাচ্ছি না। অনেক ঘুরে ঘুরে স্বণালী গার্মেন্টস থেকে একটি সূতি পোশাক কিনেছি।
এবারের ঈদে কিশোরী ,তরুনী ,নববধূ ও বাঙালী নারী পছন্দের তালিকায় রয়েছে শাড়ি। ব্যবসায়ীরা জানান, ১২ রোজার পরথেকে বিভিন্ন বয়সী নারীরা শাড়িরদোকানে ভিড় করছেন । ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে নিত্য নতুন শাড়ি আনতে হয় আমাদের । শাড়ির বাজারের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। আগে ঈদে ভারতীয় শাড়ির কদর ছিল বেশি। কিন্তু এবার ঈদে দেশি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা হয়েছে।
ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের সত্তাধিকারি তাপস অধিকারি জানান, ঈদে বরাবরই দেশি শাড়ির চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন প্রিন্ট আর নানা রঙের বৈচিত্র বাংলাদেশী নারীকে করে তোলে আর্কষনীয়। বাংলাদেশি শাড়ির মান ও কারুকাজ ভাল হওয়াতে এখন এ শাড়ি বাইরেও যাচ্ছে। এবার জর্জেট, নেটের জর্জেট শাড়ি ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকার জামদানি, টাঙ্গাইল ও তাঁতের শাড়ি ও অনেকে কিনছেন ।
বেবী প্লাজা মার্কেটের শিকদার বস্ত্রালয়ের উজ্জল শিকদার জানান, ঈদকে সামনে আমরা নিত্য নতুন ডিজাইনের জজেট, কাতান, রাজশাহী স্লিক, জামদানী, ট্ঈাাইল শাড়ি এনেছি। ১৫ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। অন্য বারের তুলনায় বেচাকেনা খুব ভাল।
অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, ১২/১৫ রোজার পর শাড়ি বিক্রি শুরু হয়েছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বিক্রি ভাল। এ শাড়ি বিক্রি চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত। শাড়ি কিনতে আসা হাসপাতাল পাড়ার ডালিম বেগম জানান, এবার ঈদে দেশি জামদানী শাড়ী কিনেছি । রং, ডিজাইন ও মান ভাল হওয়াতে এ শাড়ি আমার পছন্দ।
পাশাপাশি ঈদের পছন্দের পোশাক কিনতে শহরের ফুটপাত গুলোতেও নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেয়েদের লেহেঙ্গা, ফ্রক, শার্ট, প্যান্ট,বেবি ড্রেস, পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন ধরণের পোশাক পাওয়া যাচ্ছেশহরের থানার সামনের দোকান গুলোতে। শহরের পাশ্ববতী আবালপুর গ্রামের অটো চালক তৈয়ব আলী জানান, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন কষ্ট করে অল্প টাকা রোজগার করি। ঈদের ছেলে-মেয়েদের পোশাক কিনতে এসেছি। অন্যবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি হওয়ায় হিমসিম খাচ্ছি। নিজের পোশাকটি না কিনতে পারলেও ছেলেমেয়েদের কিছু পোশাক কিনেছি।
অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে শহরের পুটপাতগুলোতে নি¤œ আয়ের মানুষ চুরি-মালার দোকানের পসরা বসিয়েছে। সেখানে শিশুদের ক্লিপ, নানা রঙের চুড়ি, ফিতা, মালা, চেনসহ নানা উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন তরুণী-মহিলা এসব দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনছেন ।
ঈদে বিভিন্ন মার্কেটে ও বিপনিবিতানের সামনে পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।