ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে রোববার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নাসিরনগরে ১৫টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ঘটনার দিন রাতে ওসি আবদুল কাদের ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহম্মেদের অপসারণ দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগ।
পুলিশ সুপার বলেন, “ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ওসি আবদুল কাদেরকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
এর আগে ঘটনার পরদিন সোমবার সকালে দুটি মামলা হয়। প্রত্যেক মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিম।
রোববার হামলা-ভাঙচুরের পর আটক নয় জনকে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত হয়েছে তিনটি কমিটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেইসবুক পাতায় একটি পোস্ট নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান।
ফেইসবুকে রসরাজ ‘ইসলাম অবমাননা করে’ পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ তাকে শনিবার আটক করে। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ব্যানারে রোববার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে। হবিগঞ্জের মাধবপুরেও ডাকা হয় একই কর্মসূচি।
রসরাজের শাস্তির দাবিতে একদল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। আর কয়েকশ লোক সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, অবরোধ থেকে একদল লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে নাসিরনগর সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমঃশূদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দির গুঁড়িয়ে দেয়।
উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া পাড়া, মহাকাল পাড়া, কাশিপাড়া, নমসুদপাড়া, মালিপাড়া, শীলপাড়াতেও হামলা হয়।
পূজা উদযাপন পরিষদের নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার বলেন, মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শর বেশি বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এ সময় কয়েকজন পূজারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন বলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি আদেশ দেব জানান।
এ বছরের শুরুতে এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।