অগ্রসর রিপোর্ট: মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন ড. শেখ আব্দুর রশিদ। দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দুই বছরের জন্য তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অতিরিক্ত সচিব থেকে তিনি অবসরে যান গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ আব্দুর রশিদকে চুক্তিরভিত্তিক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব করা হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী ড. শেখ আব্দুর রশিদ (পরিচিতি নং-১৫৩০)-কে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ অথবা যোগদানের তারিখ হতে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে এবং জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।
ড. শেখ আব্দুর রশীদ গত ১৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে যোগদান করেন। সিভিল সার্ভিল (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের এ কর্মকর্তা মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি সরকারের জাতীয় ও নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন স্তরে ভূমিকা রেখেছেন।
এর আগে তিনি জননিরাপত্তা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা বিভাগের উপসচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি ও লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনুষদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের দি হেগ শহরে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ হতে পাবলিক পলিসি অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে লোকপ্রশাসন বিষয়ে পিএইচডি লাভ করেন। ইতোপূর্বে তিনি এসএসসি ও এইচএসসিতে উভয় পরীক্ষার মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি বিসিএসের ১৯৮২ ব্যাচের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ ও প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে রশীদ এ পর্যন্ত বেশ কিছু বৈদেশিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সার উন্নয়ন কেন্দ্র, ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরিতে অবস্থিত ‘নেভাল পোস্টগ্রাজুয়েট স্কুল’ সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়া, কৃষি প্রকল্প পরিষেবা কেন্দ্র, কাঠমান্ডু উল্লেখযোগ্য।
এদিকে বর্তমানে সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুব হোসেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশের ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
গত বছরের ১৩ অক্টোবর মাহবুব হোসেনের অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। তবে তখন অবসরে না পাঠিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাকে আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল। সেই হিসেবে আগামী ১৩ অক্টোবর তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কর্মদিবস হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবারই (১০ অক্টোবর) তার শেষ কর্মদিবস। এর আগেই নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিয়োগ দিলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এদিকে যাত্রাবাড়া থানায় একটি হত্যা মামলায় সদ্য বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনকে আসামি করা হয়েছে বলে আলোচনা চলছে। ওই মামলায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে মাহবুব হোসেন নামে একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিদায় নিতে যাওয়া মাহবুব হোসেন ছাড়া এই নামে আর কোনো মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন না। সেজন্য ধারণা করা হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে বিদায় নিতে যাওয়া মাহবুব হোসেনকেই ওই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।