নিজস্ব প্রতিবেদক : নৃশংস, চাঞ্চল্যকর ও ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১২, ১৩ ও ১৪ জুন আসামীপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য পেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।
ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুয়ায়ি আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।
মামলার সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বাসস’কে আজ এ কথা বলেন। তিনি জানান, স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ আইও’কে আসামীপক্ষে জেরা শেষ করার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্মী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
সরকারি কৌঁসুলি কাজল বলেন, চার্জশিটে অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, ৮ জন জামিনে রয়েছে এবং বাকিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি হয়। মামলার আরেক আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার মামলায়।
মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা-সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছে।
পলাতকদের মধ্যে তারেক রহমান রয়েছে লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কলকাতা, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের একটি কারগারে এবং মওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মওলানা আবু বর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মওলানা লিটন ওরফ জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ডিএমপি’র তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ও ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ওবায়দুর রহমান এবং খান সৈয়দ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছে।
তবে আসামী (সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা) হারিছ চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি।