টাকা ছড়ানোর অভিযোগ : বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। অর্থশালী প্রার্থীদের লোক ভোট কিনতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন। নগদ অর্থ ছাড়াও ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, টি-শার্ট, থ্রিপিসসহ নানা উপহারসামগ্রী। ভোট কিনতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ও সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন। এই প্রার্থীর পক্ষে ভোট নিতে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করানো হচ্ছে ভোটারদের। ১ নম্বর ওয়ার্ডে এক প্রার্থী বহিরাগত লোকদের টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, ‘২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তত্ক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারে যেতে না দেওয়ায় গতকাল ইসির কাছে নালিশ করেছে দলটি। বিদায়ের আগে ভালো নির্বাচন করার ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শেরেবাংলানগর ইসি কার্যালয়ে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ অভিযোগ করেন।
বিশেষ নজরদারিতে ১৩৭ কেন্দ্র : নাসিক নির্বাচনে ১৩৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ, যা মোট কেন্দ্রের শতকরা ৭৯ ভাগ। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ওই কেন্দ্রগুলোয় গোলযোগের শঙ্কা করছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ১৭৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নগরীর ১৭৪টি কেন্দ্রের সবখানে ২৪ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত রাখা হলেও ১৩৭টি কেন্দ্রকে বিশেষ নজরে রাখা হবে। ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হলে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর পুলিশ লাইনস এলাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানিয়ে বলেন, আইনে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষায় গুলি চালানোর বিধান রয়েছে। নির্বাচনে কেউ কেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছুড়বে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য গুলি না ছোড়েন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের চাহিদার অতিরিক্ত ফোর্স দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আরও দেওয়া হবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কে সরকারি বা বিরোধী দল তা দেখার সময় নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব পদক্ষেপ নেবে। এদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে নেমেছেন ২২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। এর মধ্যে ১০ প্লাটুন থাকবে সিদ্ধিরগঞ্জে। এ ছাড়া শহর এলাকায় ৭ প্লাটুন ও বন্দর এলাকায় ৫ প্লাটুন বিজিবি থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশের ৩টি করে মোট ৮১টি টিম টহলে থাকবে। প্রতিটি টিমের সদস্য হবেন ১২ জন। ভোট গ্রহণকালে শিল্পপুলিশের ২০০ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। পুলিশের ৪ হাজার, র্যাবের ৬০০, বিজিবির ২২ প্লাটুন, কোস্টগার্ড ৩ প্লাটুন, আনসারসহ প্রায় সাড়ে ৯ হাজার সদস্য মাঠে থাকবেন। ভোটের পরদিন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ ৭, অস্ত্রসহ ব্যাটালিয়ন আনসার ৩, অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপির ১৪— মোট ২৪ জন সদস্য থাকবেন। নির্বাহী হাকিম ৫ ডিসেম্বর থেকে মাঠে রয়েছেন ২৭টি ওয়ার্ডে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের প্রবেশদ্বার, নারায়ণগঞ্জ শহর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক চৌকি। পাড়া-মহল্লায় র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি টহল দিচ্ছে।