জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার আজ ২৪ মার্চ রবিবার এক বিবৃতিতে বলেন, বয়কট ইন্ডিয়া, ভারতীয় পণ্য বর্জনের রাজনীতি নতুন কিছু না। ১৯৪৭ সাল থেকে রাজনৈতিক মোল্লাতন্ত্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষক সামরিক শাসকরা ‘ইসলাম বিপদে আছে’ এবং ‘ভারত দ্বারা পাকিস্তানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপদগ্রস্থ ও বিপন্ন হচ্ছে’ বলে ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে, ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার যে রাজনীতি চালু করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলের সেই বস্তাপঁচা রাজনীতিই আবার নতুন করে আমদানি করা হচ্ছে মাত্র। এই একই কথা বলে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলাভাষা, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধীতা করা হয়েছে। বাঙালি জাতিকে হীনবল করতে জাতির উপর অবদমন, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং ১৯৭১ সালে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।
জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, ‘বয়কট ভারত’বা ‘ভারতীয় পণ্য বর্জণ’ কোনো নিষ্পাপ সামাজিক আন্দোলন বা জাতীয় অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী করার জাতীয় অর্থনৈতিক আন্দোলন না। যারা ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে ভারত বিরোধীতার রাজনীতি করেছে, তারা অতীত বা বর্তমানে জনজীবনের সমস্যা ও সংকটের সমাধান করে জনজীবনে স্বস্তি ও জীবনমান উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিকে আরও স্বাবলম্বী, শক্তিশালী ও গণমুখী ধারায় প্রবাহিত করার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক—অর্থনৈতিক কোন প্রস্তাবনা দিতে পারে নাই।
বর্তমানে ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ ও ‘ভারতীয় পণ্য বর্জণের রাজনীতি ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে জলঘোলা করে, উত্তেজনা তৈরি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপি—জামাত ও তাদের রাজনৈতিক পার্টনার মোল্লাতন্ত্রের ক্ষমতা পুনর্দখলের রাজনীতিরই একটি ছদ্মবেশ। জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক মোল্লাতন্ত্রের সাথে সুর মিলিয়ে ভারত বিরোধীতা, হিন্দু বিরোধিতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী, উদার—গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারকবাহকদের বিরোধীতা করাকে দেশপ্রেমের একমাত্র মাপকাঠি বানিয়ে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইনু—শিরীন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ একই সাথে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ দক্ষিন এশিয়ার দেশিগুলি, চীন, জাপান, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমুহ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলি, দক্ষিন আমেরিকা, দক্ষিন আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দেশগুলির সাথে সমানতালে কুটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বানিজ্যিক লেনদেন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাসদ নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তির ভূ—রাজনৈতিক স্বার্থগত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যেও বাংলাদেশ কোনো বৃহৎ শক্তির ভু—রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে নিজের দেশের সামান্যতম স্বার্থ ছেড়ে দেয়নি। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বানিজ্যিক লেনদেনে যে সব দেশের সাথে বানিজ্য ঘাটতি আছে তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়িয়ে আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশী পণ্য বিদেশে রপ্তানি বাড়িয়েই চলছে। বহুক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ উৎপাদনে স্বাবলম্বীতা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তারা বলেন, করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন স্থবির হয়ে গিয়েছিল, আন্তর্জাতিক বানিজ্যিক লেনদেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখনও বাংলাদেশ দেশের চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় উৎপাদন করতে সমর্থ হয়েছে। নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, অতীতে সামরিক শাসক ও তাদের সৃষ্ট রাজনৈতিক দল ও তাদের রাজনৈতিক পার্টনার রাজনৈতিক মোল্লাতন্ত্রের শাসনামলে বৃহৎ শক্তির আনুকূল্য পাওয়ার স্বার্থে দেশের স্বার্থের কথা ভুলে যাওয়া, জলাঞ্জলির ঘটনার শত শত প্রমাণ দেখা গেলেও বর্তমান সরকার বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশে ভারতের সাথে ভূ—সীমান্ত চিন্থিত করণের মধ্য দেশে প্রতিটি ইঞ্চির উপর দেশের সার্বভৌমত্বই নিশ্চিত করেছে একই সাথে ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সীমানা ও আয়তন ৩৬.১৮ বর্গকিলোমিটার(১০,০৫০একর) বড় হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে ভারত ও মায়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা লড়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ নৌ—সীমানা মহীসোপান চিন্থিত করেছে। জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের জনগণের উপর যুক্তরাষ্টের মদদে বর্বরতম গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও বলিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করেছে।
ইনু—শিরীন আরো বলেন, বয়কট ভারত ও ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বিএনপি—জামাত এবং তাদের রাজনৈতিক পার্টনার ও রাজনৈতিক মোল্লাতন্ত্রের ক্ষমতা পুনর্দখলের জন্য পাকিস্তান আমলের বস্তাপঁচা নোংরা রাজনীতি প্রতিহত করার আহবান জানান।