অগ্রসর রিপোর্ট : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছেন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হায়দরাবাদ হাউজে পৌঁছালে নরেন্দ্র মোদি তাকে অভ্যর্থনা জানান। ১১টা ৩৫ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়।
দুই দফায় ১২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত এ বৈঠক হবে। বৈঠকে একান্ত কথা বলবেন দুই সরকারপ্রধান। এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিনিধি পর্যায়েও আলোচনা হবে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি প্রেস বিবৃতি দেয়া হবে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তার সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজনে যোগ দেবেন।
এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বলেন, “আমি আশা করি এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে এবং আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করা এবং আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা- যা আমরা করতে সক্ষম হব। বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সুতরাং, আমরা সবসময় এটিই করি।”
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা, নিত্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ, আরোপিত বাণিজ্যিক বাধা অপসারণ, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি, বিবিআইএন কার্যকর, নেপাল ও ভুটানের জন্য বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের নিশ্চয়তা চাইতে পারে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিবর্তিত বিশ্বে কূটনীতি, ব্যাবসা-বাণিজ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ভারতের জোর সহায়তা চাইতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে পানিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান নিয়েও।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানি তেল আমদানি করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
ভারতের সঙ্গে জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সোমবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে যেসব কৌশলগত পণ্য আমদানি করে, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভারত যাতে বাংলাদেশকে অবহিত করে, এ বিষয়টি মূল আলোচনায় থাকবে।
আরেকটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত ডিজেল রপ্তানি করতে চায় ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভারতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত) মোটরযান চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জোর দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির সময় রেলে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখা নিশ্চিত করেছিল ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত প্রস্তাব দিয়েছে চাল, গম, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে, তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আগাম জানাতে।
বাংলাদেশ নিজের চাহিদার কথা জানালে ভারত আগে থেকে সেটি বিবেচনায় নেবে। ফলে ভারত নিজের চাহিদা মেটানোর পর বাংলাদেশের চাহিদার বিষয়টিও মাথায় রাখবে। এতে করে বাংলাদেশের প্রয়োজনের সময় ভারত ওই পণ্যগুলোর জোগান নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে। দুই দেশের শীর্ষ নেতার আলোচনায় বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
একইদিন শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এর আগে শেখ হাসিনা সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপ্রতি ভবনে যান। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এরপর শেখ হাসিনা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
চারদিনের সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সোমবার দুপুরে দিল্লি পৌঁছার পর তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এরপর বিকালে হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ জিয়ারত ও আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। রাতে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দেওয়া সংবর্ধনা ও নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
সফরের তৃতীয় দিন ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরিব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) জিয়ারত করবেন।