স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বেতনভাতা বাড়ানো হয়েছে, কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’
রোববার সকালে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে এটি ছিল সরকারের সর্বোচ্চ আমলাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বৈঠক।
সচিবদের সরকারের অন্যতম চালিকাশক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে। কিন্তু সচিবদের আরও অনেক দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দেয়ার সুযোগ থাকে। কাজেই এটা সচিবদের ওপরই নির্ভর করে দেশ কীভাবে চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী দক্ষ এবং যোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব প্রদানের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয় তার উদ্যোগ নিন।’
একইসঙ্গে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সকলের ন্যায়-সঙ্গত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য কমানো এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়।’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিন। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালুর উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ সংশোধন করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯, এবং জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় শুদ্ধাচারের কৌশলপত্র।
পরিবেশ সংরক্ষণে সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড় ও টিলা অধ্যুষিত এলাকায় পরিবেশ রক্ষাসহ ভূমিধস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে আরও আন্তরিক হতে হবে। এবারের মত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না।’
জনগণের ভোগান্তি হ্রাসে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এবং মামলার জট কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কেবল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে জনকল্যাণে সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মনিয়োগের জন্য সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থবছরের শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে অর্থবছরের শুরু থেকেই উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এডিপির আকার এবং বাস্তবায়নের হার বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ সালে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ছিল ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। ৮ বছরে বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৬ দশমিক ২৫ গুণের বেশি।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের তৃতীয় বর্ষে শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে হবে। অর্থবছরের শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করুন।
তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করুন। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত করে ফেলুন। পাশাপাশি কাজের গুণগতমানের সঙ্গে কোনো আপোষ করা যাবে না। ‘ফাস্ট ট্রাক’ ভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধাতি সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
বৈঠকের শুরুতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলতে সরকারের সংস্কার কর্মসূচির উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন।
এ সময় অন্যানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।