অগ্রসর রিপোর্টঃ দুজনই স্কুলে পড়ছে। অন্য শিশুদের মতোই সহপাঠীদের সঙ্গে মিশছে। সবকিছুই চলছে স্বাভাবিকভাবে। বাড়ছে না শুধু শরীর।
বলছি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার উল্লাসর গ্রামের শিশু ফারহানা (১১) ও আরাফাতের (৮) কথা। সহোদর এ দুই শিশু বিরল রোগ ল্যারন সিনড্রোমে (গ্রোথ হরমোনজনিত সমস্যা) আক্রান্ত। তাদের ভর্তি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগে।
শিশু দুটির বাবার নাম মো. ইয়াসিন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। মা শাহানারা বেগম গৃহিণী। শাহজালাল নামে তাদের বড় এক ভাই আছে। সে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ছে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফারহানার জন্ম ২০০৫ সালে। আর আরাফাতের জন্ম ২০০৮ সালে। অথচ তাদের দেখতে মনে হয় তিন-চার বছরের শিশুর মতো ফারহানা শাহরাস্তির একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। আর আরাফাত পড়ছে শিশু শ্রেণিতে। ফারহানা ক্লাসে প্রথম হয়েছে। আরাফাতও ভালো ছাত্র।
উচ্ছ্ল শিশু দুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্কুলে তারা অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে চায়। শিক্ষকরা তাদের আদর-যত্ন করেন। কোলে নিয়ে পড়ান। তবে আকারে ছোট বলে অনেক সহপাঠী তাদের মারধর করে।
চিকিৎসকদের ভাষ্য
বিএসএমএমই্উর অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ হাসনাত এবং সহকারী অধ্যাপক শারমিন জাহানের তত্ত্বাবধানে আছে শিশু দুটি। তাদের চিকিৎসা নিয়ে কথা হয় এ দুই চিকিৎসকের সঙ্গে। তাঁরা এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে শিশুদের নিয়ে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তাদের অভিভাবকরা। তখন প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে পরবর্তী সময়ে দুজনকে নিয়ে হাসপাতালে আসার কথা বলা হয়েছিল।
চিকিৎসকদ্বয় জানান, ল্যারন সিনড্রোম হরমোনজনিত সমস্যা। সারা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫০ জনের মতো। বাংলাদেশে রোগটিতে প্রথম আক্রান্ত হয়েছে সহোদর এ দুই শিশু।
এই রোগের লক্ষণ হলো, বয়স অনুপাতে যেমন বেড়ে ওঠার কথা, সেভাবে রোগী বেড়ে ওঠে না। তবে রোগীর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সাধারণত ব্যাহত হয় না।এম এ হাসনাত ও শারমিন জাহান এনটিভি অনলাইনকে জানান, বংশগত কারণে শিশু দুটি দুরারোগ্য এ ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে তাঁদের ধারণা। তাদের চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ প্রয়োজন, সেটি বাংলাদেশে নেই। প্রতিদিন একটি শিশুকে দুবার করে ইনক্রিলেক নামে এক ধরনের ইনজেকশন দিতে হবে। টানা ১২ থেকে ১৫ বছর এ চিকিৎসা নিতে হবে। আনুষঙ্গিক খরচসহ দুজনের চিকিৎসায় মাসিক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হবে। কমপক্ষে পাঁচ বছর এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
চিকিৎসকদ্বয় আরো জানান, সাধারণত এই বয়সী শিশুদের ছয় থেকে সাত ন্যানোগ্রাম গ্রোথ হরমোন থাকে। কিন্তু এই শিশুদের ৩৫ থেকে ৪০ ন্যানোগ্রাম রয়েছে। কিন্তু তা শরীরে কাজ করছে না। তাদের হাড়গুলো যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা, সেভাবে বাড়ছে না। ইনক্রিলেক ইনজেকশন দেওয়া হলে হরমোন কাজ করবে। বাংলাদেশ এ ইনজেকশন না থাকায় তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিশু দুটির বিষয়ে চিকিৎসক শারমিন জাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লিটলম্যান ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা রয়েছে, যারা হরমোনজনিত কারণে খর্বাকৃতির শিকার শিশুদের নিয়ে কাজ করে। সংগঠনটি এ ধরনের শিশুদের সাহায্য করে। বাংলাদেশের বিত্তবান এবং বিদেশিদের সাহায্য ছাড়া তাদের চিকিৎসা সম্ভব হবে না।
মায়ের আকুতি
মা শাহানারা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আবুধাবিতে থাকা তাঁর স্বামী অসুস্থ। তিনি কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। এমন পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলেই শিশুদের চিকিৎসা সম্ভব।
শিশুদের সাহায্য পাঠাতে ০১৬২৬৪৬১৬৬১ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।