স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ চট্টগ্রামে দেশের প্রথম বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এই বাণিজ্য কেন্দ্র নির্মাণের ফলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সকল খাতে দেশ এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ সকল খাতে এগিয়ে যাবে। বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আমদানি ও রফতানি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন গতি সঞ্চার হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র (ডব্লিউটিসি) চত্বরে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ এমপি বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামের জনগণ তাদের এই নগরীতে দেশের প্রথম বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র পেয়ে অবশ্যই গর্বিত। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ নগরীতে নির্মিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের আলোকেই এটি নির্মীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এ ধরনের কেন্দ্র নির্মিত হওয়ায় চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাথে আমাদের পৃথক সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা বলতে পারেন… ছোট বেলা থেকে এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি। এ সময়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অতিথিরা করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।
চট্টগ্রামে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র নির্মাণের পটভূমি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে মেয়াদে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। আজ বহু বছর পর এই কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
শেখ হাসিনা সকল খাতে দেশকে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে যথাসময়ে কর পরিশোধ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি যথাসময়ে কর পরিশোধ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। যাতে আমাদের উন্নয়ন আমরা নিজেরাই করতে পারি এবং আমাদের ভিক্ষা করার কোনো প্রয়োজন না হয়।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবসায়ীদেরকে যথাসময়ে কর দিতে হবে যাতে আমরা কাজ করতে পারি। আপনারা যে কর দিবেন তা দেশের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে এবং আমার লক্ষ্য হচ্ছে- দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের সামনে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা একটি চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশকে খাটো করার প্রয়াস ছিল।
তিনি বলেন, আরেকটি বড় কথা হচ্ছে আমাকে, আমার পরিবারের সদস্যদেরকে এবং বাংলাদেশকে টার্গেট করা হয়েছিল। আমরা সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলাম এবং বিজয়ী হয়েছি। আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থে মেগা প্রকল্পে কাজ শুরু করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে যেসব পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে সেগুলোর জন্য বিদেশে বাজার অনুসন্ধান এবং বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার (বিসিআইএম) ইকোনোমিক করিডোরসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আপনাদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি। তাই আমরা চাই যে, আপনারা বিভিন্ন দেশের চাহিদা বিবেচনা করে নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং বাংলাদেশে সেসব পণ্য উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পণ্যের উৎপাদনশীলতা ও মান বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও আকর্ষণ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়ে পণ্য বহুমুখীকরণের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরের ন্যায় চট্টগ্রামেও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার স্থাপিত হল। বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে সামিল হওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যে কোন দেশের জন্যই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক। এই সেন্টারে দেশের সকল রপ্তানি পণ্য একই ছাদের নীচে প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। বিদেশীরা এখানে এসে আমাদের পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে জানতে পারবে যা আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি করবে।
প্রধানমন্ত্রী এই বিশাল ও সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য চিটাগাং চেম্বার নেতৃত্বকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শত শত বছরের ঐতিহ্যের অধিকারী। আরব, চীন, পর্তুগীজ, স্পেনিস ও ব্রিটিশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বণিকরা চট্টগ্রামে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। এরফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এই শহরের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যের অন্যতম অংশীদার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ী সমাজের বহুমুখী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, আমদানি-রপ্তানি, কর্মসংস্থান, রাজস্ব ও কর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে চিটাগাং চেম্বার সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দু’টি অর্থনৈতিক জোট সার্ক এবং আশিয়ানের সংযোগস্থল এই চট্টগ্রাম। তাই আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এই শহরের গুরুত্ব অত্যধিক।
তিনি আরো বলেন, আমরা গত ৭ বছরে চট্টগ্রামে নতুন নতুন সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণসহ এ নগরীর যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রামের হাইওয়ের ৪ লেনের কাজ শেষ হয়েছে। এই হাইওয়েকে ৮ লেন করার কাজও শুরু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি যাতে কর্ণফুলীর দুইপাড়ে সাংহাইয়ের আদলে ‘ ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে আমরা মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মূল পাইপ লাইন বসানোর দরপত্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা মহেশখালীতে কয়ালাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছি। বন্দর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে শিল্পায়নের লক্ষ্যে আমরা মিরেরসরাইয়ে ১টি এবং আনোয়ারায় ২টি স্পেশাল ইকনোমিক জোন স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি।
তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রাম নয়, আমরা গত ৭ বছরে দেশব্যাপী যে উন্নয়ন করেছি তা ইতোপূর্বে কোন সরকার করতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। আমাদের আজ অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই পরিবর্তন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও)-তে ২০১৫ সালের জন্য এলডিসি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ডব্লিউটিও’র নেগোশিয়েশনে আরও জোরালোভাবে উত্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ব্যবসা-বান্ধব সরকার। আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না। আমাদের সরকার দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সব রকমের সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং এর শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চট্টগ্রামসহ দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হব।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।