স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিচার বিভাগ জাতীয় উন্নয়নের মাইলফলক। জনগণের প্রত্যাশা বিচার বিভাগের কাছে বেশি। বিচার কাজের মাধ্যেমে বিচারকগণকে জনগণের সে প্রত্যাশা সমুন্নত রাখতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৫’র উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জ্যেষ্ঠ জেলা জজ মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের সচিবগণ। দেশের অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এ সম্মেলনে অংশ নেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ন্যায় বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু নানা কারণে জনগণ সে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। মানুষের শেষ ভরসার স্থল বিচার বিভাগ। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা-মোকাদ্দমার যুক্তি-তর্ক সম্পন্ন করার বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি।
বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগের অপরিহার্য কাঠামো উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারকার্যের মাধ্যমে বিচার বিভাগ গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারকরা জাতির বিবেক। তাই সংবিধান, আইনের প্রতি অবিচল আস্থা, দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলে রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে- বিলম্বে বিচার ও মামলা জট। এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। দায়িত্বপালনে নিরপেক্ষ থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকরা সর্বোচ্চ আন্তরিক হবেন- জনগণ তা প্রত্যাশা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি আবেদনের শুনানি সমাপ্তের পর বা মোকাদ্দমার যুক্তিতর্ক শুনানির পর আদেশ লাভে যাতে বিলম্ব না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি যেমন জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বিচারকরাও বিবেকের নিকট স্বচ্ছ থাকবেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’- এ নীতিবাক্য আমাদের বিচারব্যবস্থায় প্রচলিত থাকুক আমরা তা আর চাই না। তিনি উচ্চ আদালতের কার্যক্রম ডিজিটালেজাইশেন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। অনলাইনে জামিন আদেশ নিশ্চিত করাকে জনদুর্ভোগ কমাবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিচারক ও মামলার সংখ্যায় ভারসাম্য আনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচার কার্যে কাক্সিক্ষত গতি আনয়নের জন্য পর্যাপ্ত বিচার কক্ষ, বিচারকের শূন্যপদে নিয়োগ এবং বিচারক ও মোকদ্দমার সংখ্যায় যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক।
তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় আইনজীবীদের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই অহেতুক বিলম্ব বা অত্যাধিক আর্থিক চাপের কারণে বিচার কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং বিচারপ্রার্থীরা যাতে ন্যায় বিচার পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার অনেক বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েছে। এতে দেশে ও বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নি¤œ মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দারিদ্রের হার হ্রাস পাচ্ছে। নিজেদের আয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বিশ্বে উন্নয়নের এক রোলমডেল হচ্ছে বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে ২০০৫ সালে ১৪ নভেম্বর বোমা হামলায় নির্মমভাবে নিহত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে এবং মো. সোহেল আহমেদের পরিবারকে সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে অনুদান দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ নিহত দ্ইু বিচারকের স্ত্রীর হাতে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।