অগ্রসর রিপোর্ট : দেশে ভোট চুরির সংস্কৃতি চালু করার জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আর কাউকে ভবিষ্যতে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবশ্যই যথাসময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কাউকে জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ভাষণকালে একথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই নির্বাচন পরিচালনা করবে। আমরা সেটা নিশ্চিত করবো। এটা নিয়ে অহেতুক পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা, আর সংবিধান লঙ্ঘন করে অন্যকিছু করার কোন সুযোগ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের শরণার্থীদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করার পাশাপাশি দেশে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তবে, এক দেশের জনগণ অন্যদেশের শরণার্থী হয়ে থাকলে সেটা সেই দেশের জন্য যে সম্মানজনক নয়, এটা মিয়ানমারকে বুঝতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিএনপি’র তোলা বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার হাসিই পায়- বিএনপি যখন নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে, তখন মনে হয় আয়নায় তাদের নিজেদের চেহারাটা দেখা উচিত।’
নির্বাচনকে প্রভাবিত করার রাজনীতি বিএনপির হাত ধরেই শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার শুরুই করেছে বিএনপি, যখন জিয়া ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।’
তিনি বলেন, জিয়া ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের প্রহসন করে, একাধারে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দিয়েও সেখানে একশ’ ভাগেরও বেশী ভোট পেয়েছিল। মানুষের ভোট দেয়ার কোন অধিকারই তখন ছিল না। কাজেই মানুষকে ভোট দেয়ার এই অধিকারতো নষ্ট করে গেছেন জিয়াউর রহমান।
বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলকারী রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে যে দলটি করা হয়েছিল এবং এই দলটি ক্ষমতায় থাকতে এদেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল, তা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। আবার বিরোধীদলে থাকতে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যাও তারা করেছে। খুন, হত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এটাই মনে হয় তাদের চরিত্র।
১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন পূর্ব পরিকল্পিত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগেই ঠিক ছিল আওয়ামী লীগকে ৪০টির বেশি আসন দেয়া হবে না, ৩৯টি আসন পেয়েছিল আওয়ামী লীগ।
এরপর শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন এবং বিএনপি’র আমলে ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচন এবং মিরপুরের উপ-নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।’
তিনি বলেন, ‘ভোট চুরির অপরাধে নির্বাচনের দেড় মাসের মাথায় জনগণ আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করে।’
বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত দুর্নীতির পাশাপাশি তার শাসমামলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বলেও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
একইসঙ্গে তাঁর শাসনামলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করায় বিএনপিও বিভিন্ন আসনে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়েছে বলে তিনি উদাহারণ দেন।
এছাড়া তাঁর সময়ে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা বাজেটে বরাদ্দ দিয়ে দেই, তারা (নির্বাচন কমিশন) তাদের টাকা খরচ করে। সেখানে তাদের সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। নির্বাচন চলাকালে প্রশাসন এবং সবকিছু তাদের (নির্বাচন কমিশন) হাতে থাকে।’
তিনি বলেন, তার সরকার ২০১৪ সালে যে নির্বাচন করেছিল তাতেই স্পষ্ট দেখা গেছে- নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবেই তাদের কাজ করে থাকে। তাছাড়া একেবারে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, মেয়র সকল নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে, স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং সেখানে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয় সেজন্য যা যা করণীয় তার সব আমরা, আওয়ামী লীগই করেছি। আমরা যে ১৪ দলীয় জোট করেছিলাম সেখান থেকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং জনগণকে যে ওয়াদা দিয়েছিলাম তা রেখেছি।’
সরকার প্রধান দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘কাজেই জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। অন্তত, আমরা তা হতে দেবো না।’
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের শরণার্থী প্রসঙ্গে বলেন, সেই ’৭৮ সাল থেকে আমাদের দেশে শরনার্থী ঢুকছে। আমাদের রেজিস্ট্রারে যা আছে, আনরেজিস্ট্রার্ড তার থেকে অনেক বেশি। শিশু-নারীরা যেভাবে আসছে, যেভাবে মারা যাচ্ছে, তাতেই কষ্টটা বেশি লাগছে। সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষ-জন আসছে এবং আমরাও চেষ্টা করছি তাদের সহযোগিতা করার।
তিনি বলেন, ‘সেই সাথে আমরা মিয়ানমার সরকারের ওপরও চাপ দিচ্ছি যেন তারা তাদের দেশের মানুষ, যারা আমাদের দেশে আছে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আজ যারা আমাদের দেশে এসে আশ্রয় চাচ্ছে, মিয়ানমারের উচিত তাদের ফিরিয়ে নেয়া ও নিরাপত্তা দেয়া এবং তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা।’
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।